লাল ইটের দেশে...

 ম্যাজিকের  শহর ঢাকায় এবার গেছিলাম আমরা ৪ জন দিকভ্রান্ত যুবক, যাদের প্রধানতম উদ্দেশ্য ছিল খুবি কম খরচে কিভাবে এ কদিনের ট্যুর সম্পন্ন করা যায়। আর সবার কথা আমি জানি না, আমার মনে অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল একটাই, জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়টা একটু ঘুরে দেখবার, না জানি আরেকটু বড় বা বুড়ো হয়ে গেলে আর আসা হয় কিনা। এই লেখাটায় আমি পুরো ট্যুর নিয়ে তেমন কিছুই বলব না, শুধু বলব জাহাঙ্গিরনগর নিয়েই। দিনক্ষণ ৩১-০৫-১৮।

মেগা সিটি ঢাকা থেকেই ওদিন বের হতে আমাদের সময় লেগেছিল মাত্র ৪ ঘন্টা! তবে ভাগ্য ভাল, সূর্যদেবী আমাদের উপর নাখোশ না হয়ে সেদিন বেশ ঠান্ডাই ছিলেন। সব কিছুই ভালোই চলছিল, গাবতলীর পর বাস খুব জোরেই টানছিল, বিপত্তি ঘটল সাভারের কিছু পরে, আচ্ছা, সে না হয় পরের কোনো লেখায় বলব, নতুবা আমাকে নিয়ে আপনার খুব বাজে ধারণা হবে বোধ করি! 😜😜

বেলা ৪টা ৩০ কি ৫ টায় পৌছালাম জাহাঙ্গীরনগরে। ঢূকতেই সেই অনেকদিন আগের, অথচ খুব চেনা সেই রাস্তা, অনেককাল আগে যারে দেখে বলা যায়, প্রথম দর্শনেই প্রেম হয়ে গিয়েছিল, শেষ বিকেলে সেদিন যেন আরো মাদকতা বাড়িয়ে দিয়েছিল। স্থান গাড়লাম আগের সেই হলটাতেই, শহীদ সালাম বরকত হল, খালি রুমটাই চেঞ্জ, ৩০৭ নম্বর, যাতে শুরুতেই সসম্মানে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানাল ধবল রঙা বিড়ালটা। রুমে ব্যাগ রেখেই ছুট, হাটতে বেরিয়ে পড়লাম। ইফতারের আগে যতটা দেখতে পারা যায়। আচ্ছা, লেখালেখি থাক, কিছুক্ষণ সেখানে তোলা কিছু মোবাইল শট দেখা যাক-

                                     





 





ছবি কথা বলে... 💓

সন্ধ্যায় ইফতারের পর শুরু হল আসল মজা।   খুব আয়েশ করে সিগারেট ফুকতে ফুকতে শুরু হল আমাদের রাতের শুরুটা। নীচুবটতলা দিয়ে বের হয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের রাস্তাটা দিয়ে হাটতে থাকলাম। চেনা পথ, মাথার ভিতর সব স্মৃতি ভিড় করতে লাগল। হাটতে হাটতে বলা হতে লাগল কত সব কথা। পরিসংখ্যানের রাস্তাটা ধরে ডানে, কি বায়ে গেলাম, ঠিক খেয়াল নাই, খুব সম্ভব ডানে মোড় নিয়ে গেলাম শহিদ মিনারের দিকে। বসে পড়লাম একপাশের সিড়িতে। চলতে লাগল আড্ডা, স্কুল কলেজের কত কথা, সেই সব পুরোনো আলাপই এখানে নতুন করে হাসায় আমাদের। একেকজনের ঝুড়িতে কত শত গল্প, শতবার শোনা এসব আমার, তবুও যেন আবারো এগুলো নতুন মনে হয়, নতুন করে আমি হাসি। আর হুম, সাথে আঙ্গুলের ফাঁকে পুড়তে লাগল একটার পর একটা সিগারেট। অনুভূতি লিখবার মত নয়, কিছু সন্ধ্যা আসে সব রকমের চিন্তা ফেলে, শুধু এসবের জন্যেই।

সেখান থেকে আবারো হাটা শুরু করলাম, এবার  মোটামোটি পুরো ক্যাম্পাসটা চক্কর দেয়া হল আমাদের। মীর মোশারফ হোসেন হল, অডিটোরিয়াম, সিএসই বিল্ডিং, ফার্মেসী,  জেনেটিক এঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং- আরো কত কি! একেকটা ভবন দেখি, আর মুখ হা করে রাখি, ভাইরে, এত সুন্দর করে এভাবে ডিজাইন করে কে, এও কি সম্ভব! রাতের লাইটিং, বসবার জায়গা, প্রতিটা ইট যেন বসাবার আগে ভাবা হয়েছে খুব গভীর করে, যেন একটি কণারও এদিক বা ওদিক না হয়ে পড়ে। এমনকি গাছগুলিও ঠিক যেখানে যেটার থাকবার কথা, ঠিক সেখানেই আছে। সাথে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ, জহির রায়হান অডিটোরিয়াম- একেকটা যেন মাস্টারপিস জায়গা! 💜













নীচু বটতলায় রাতের খাওয়া সারলাম আমরা, আবারো একি পথ ধরে এগুলাম শহিদ মিনারের দিকে, তবে মনে হয় এবারে পথের কিছুটা চেঞ্জ করে অন্য দিক দিয়ে আসলাম। এসেই শুয়ে পড়লাম সিড়িগুলোয়। দূরে মাথার উপরে আকাশ, কিছু তারা জ্বলছিল। এখানকার অনুভূতি ঠিক লিখে প্রকাশ করার মত না। গান, গল্প, আড্ডা সব একাকার। এখানকার সময়টা নিয়ে শুধু একটা কথাই বলা যায়- হাজার বছরে খুব কম রাতই হয় এমন, হয়ত আর হয় না, প্রিয়জনদের সাথে। 

আরেকটি বেস্ট পার্ট ছিল বটতলার পুকুরের পাশের ইটের বেঞ্চিটাতে বসে গান শুনতে শুনতে উপরে যে বটগাছটা আকাশে যে ছবিটা একেছিল, তার দিকে তাকিয়ে থাকা। সাথে চলছিল Countryroad take me home, 500 miles, কাঞ্চনজঙ্ঘা, এ তুমি কেমন তুমি, কফি হাউস- যাকে বলে একদম হারিয়ে যাওয়া। আশপাশটা যেন প্রবল্ভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলে আমাদের, কি বিচিত্র সেই আবেগ!

ও হ্যা, এ লেখায় নিচুবটতলের কথা বলতেই হবে, এত কম খরচে যে এত মজার সব ভর্তা আর সব্জি এখানে আছে, চেখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। সেই লেভেলের খাওয়া দাওয়া হল এবার। ৬ পদের ভর্তা মাত্র ৩০ টাকা, তাতেই পুরো ভাতের প্লেট শেষ হয়ে যাবে! কত রকম যে আইটেম, সবগুলাই মজা মজা।  

আসার দিনের কথা, বেরিয়ে আমরা তখন নীচুবটতলায়, আকাশ কালো করে নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি। টং দোকানে চা খেতে খেতে মনে হচ্ছিল, আগের বারো যাওয়ার সময় প্রচণ্ড বৃষ্টি নেমেছিল, এবারো। কি অদ্ভুত! কিছু ঘটনা প্রকৃতি নিজে থেকেই পুনরাবৃত্তি ঘটায়, যাতে আমরা তার চক্রে বাধা পড়ি শতবার, তাতে হই মুগ্ধ! 
 

আজ থাক, অনেক লিখেছি, কিন্তু আরো অনেক বাকি। এখানে সব বলাও সম্ভব না।

প্রকৃতি আমাদের হাতে সব সৌন্দর্য ধরা দিতে দেয় না, দূর থেকেই কিছু জিনিস দেখে হয়, এতেই ভালোলাগা! 😊



    

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!