আশরাফুল , পথ হারানো পথিকৃৎ
 
                              ২০১০ সালের বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড এর টেস্ট ম্যাচে মাঠে নামছেন আশরাফুল , ছবি ঃ Paul Hudson
প্রস্তুতি মাঠে আশরাফুল, ছবিঃ Mohammed Tawsif Salam
          
                                                                 আশরাফুল , ছবি ঃ Paul Hudson
বোলিং ক্যারিয়ারঃ
২০০১ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বর । টেস্ট দুনিয়ার নতুন মুখ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিয়ানব্বই এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা । টেস্ট শুরুর আগে অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়ের কাছে আসে ১৭ বছরের এক কিশোর । অধিনায়ককে সে জানায় তার স্বপ্নের কথা । ব্রায়ান লারার মত সেঞ্চুরি করার ইচ্ছা তার । ব্যাটিং এ নামল বাংলাদেশ । তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশী ব্যাটিং লাইন-আপ । ৯০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ । বিশ্বসেরা বোলার মুরালিধরনের ঘূর্ণি-যাদুতে দিশেহারা হয়ে পড়ে টেস্ট দুনিয়ায় সদ্য পা রাখা এই দলটি । ১৩ রানে ৫ উইকেট নেয় মুরালি । জবাবে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা । ৫৫৫ রানের বিশাল পাহাড় গড়ে মারভান আতাপাততুর দল । ২য় ইনিংসেও একই দশা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের । ছয় উইকেট হাতে রেখে ২য় দিন শেষ করল তারা।
৩য় দিনের খেলা শুরু হল । ক্রিজে টেস্ট অভিষেক হওয়া ১৭ বছরের এক কিশোর । মুত্তিয়া মুরালিধরণকে কখনো সীমানা ছাড়া করলেন কাভার ড্রাইভে চার মেরে, কখনোবা স্লগ সুইপে । শর্ট বলে দেখালেন কাট-পুলের বাহারি কারুকাজ ।১১৪ রানে থামে দৃষ্টিনন্দন এই ব্যাটিং প্রদর্শনী । অভিষেকেই সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম ওঠে রেকর্ড বইয়ের পাতায় । সারা বিশ্ব যার ঘূর্ণি-যাদুতে বিভ্রান্ত সেই মুত্তিয়া মুরালিধরণের বিপক্ষে তার সাবলীলতা মুগ্ধ করে তামাম দুনিয়ার সব ক্রিকেটবোদ্ধাদের । ১৭ বছরের ওই কিশোরকে চেনে সারা দুনিয়া ।
প্রস্তুতি মাঠে আশরাফুল, ছবিঃ Mohammed Tawsif Salam
হ্যাঁ , মোহাম্মদ আশরাফুলের কথাই বলছি ।আশরাফুল মানেই দৃষ্টিনন্দন কাভার ড্রাইভ , আত্মবিশ্বাসী সুইপ , বুদ্ধিদীপ্ত স্কুপ কিংবা সাহসী পুল শট । আশরাফুল মানেই জয়ের হুংকার , বোলারদের শাসন , কোটি বাঙালীর উল্লাস। আবার আশরাফুল মানেই প্রতিভার অপচয় , বিতর্ক , সমালোচনা কিংবা আক্ষেপের গল্প। 
আশরাফুলের উঠে আসার গল্পটা তার ব্যাটিং এর মতই রোমাঞ্চকর । ১৯৯৩ সালের কথা ।ঢাকার মৌচাক মোড়ে সিদ্বেশ্বরীর বালুর মাঠে অনুশীলন করত অমরজ্যোতি ক্লাবের ক্রিকেটাররা । খালেদ মাহমুদ সুজনসহ দেশের নামীদামি সব ক্রিকেটারদের পদচারণায় মুখর ছিল এই ক্লাব । হঠাৎ একদিন অমরজ্যোতি ক্লাবের নেটে হাজির হয় নয় বছরের হেংলা-পাতলা বালক আশরাফুল । তার পরিচয় সে একজন বলবয়। খালেদ মাহমুদ সুজনকে সে জানায় তার ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা । নেটে বোলিং এর সুযোগ মেলে তার । ব্যাটিং এ ঢাকার ঘরোয়া ক্রিকেটের মারকাটারি ওপেনার পার্থ । প্রথম বলেই বাজিমাত!!টার্ন এবং বাউন্সে পরাস্ত ব্যাটসম্যান । এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি । পরের বছরই অমরজ্যোতি ক্লাবে নিয়মিত হয় আশারাফুল । ছোট্ট আশরাফুলের পথচলা শুরু হয় ক্রিকেটে। 
লেগ স্পিনার হিসেবে শুরু করলেও ধীরে ধীরে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন আশরাফুল । কোচ ওয়াহিদুল গণির অধীনে নিতে থাকেন ব্যাটিং এর দীক্ষা । ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে আশরাফুলের অভিষেক হয় ২০০০ সালের ২২ শে নভেম্বর । ঢাকা মেট্রোপুলিশ ক্লাবের হয়ে । সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪১ আর ৬ রান করেন । তবে বল হাতে ৫৯ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ৫ উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচেই সেঞ্চুরি হাঁকান এই ব্যাটসম্যান । 
ওয়ানডে ক্রিকেটে আশরাফুলের অভিষেক হয় ২০০১ সালের ১১ ই এপ্রিল । জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে । ওই ম্যাচে ব্যাট হাতে সফল না হলেও বল হাতে তুলে নেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি । অবশ্য ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩৬ রানের ব্যবধানে ।পরবর্তীতে আশরাফুলের ব্যাট থেকে আসে মহাকাব্যিক কিছু ইনিংস । কার্ডিফের শতক ,ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চুরানব্বই কিংবা গায়ানার সাতাশি তার ব্যাটিং প্রতিভারই কিছু নিদর্শন । কার্ডিফে তার শতকের উপর ভর করেই বাংলাদেশ তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের প্রথম জয় । ২০০৭ বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে করা তার সাতাশি রান জয়ের স্বপ্ন দেখায় বাংলাদেশকে ।এভাবে তার হাত ধরেই বাংলাদেশ পায় ওডিআইতে তাদের নানা ঐতিহাসিক জয় । শুধু ওয়ানডে নয় , টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতেও আছে তার দৃষ্টিনন্দন কিছু ইনিংস । ভারতের বিপক্ষে করা ১৫৮ কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা ১৯০ রানের ইনিংসের ঘোর এখনও কাটাতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ ।
ব্যাটিং  ক্যারিয়ারঃ
বোলিং ক্যারিয়ারঃ
২০০৭  সালে  ২২
বছর  বয়সেই  বাংলাদেশ 
দলের অধিনায়কের  দায়িত্ব  বর্তায় 
আশরাফুলের  কাঁধে । অধিনায়ক  হিসেবে 
প্রথম ম্যাচেই  শ্রীলঙ্কার  বিপক্ষে সেঞ্চুরি  করেন 
এই  ব্যাটসম্যান । 
বাংলাদেশ  প্রিমিয়ার 
লীগে  ম্যাচ  পাতানোর 
অভিযোগ  আনা  হয় 
আশরাফুলের  বিপক্ষে । ২০১৩  সালে 
বিপিএলের  দ্বিতীয়  আসরে 
চিটাগাংস  ভাইকিংসের  বিপক্ষে 
এক  ম্যাচে  এই 
কেলেঙ্কারিতে  জড়ান তিনি । পরে  তার 
স্বীকারোক্তিতে  উঠে  আসে 
ম্যাচ  পাতানোর  আরও 
ভয়ঙ্কর  কিছু  তথ্য । বিপিএলের  দুর্নীতি 
দমন  বিভাগ  তাকে 
আট  বছরের  জন্য 
নিষিদ্ধ  করে  সব 
ধরণের  ক্রিকেট  থেকে। পরে 
অবশ্য  তার  শাস্তি 
আরও  তিন  বছর 
কমিয়ে আনা  হয় । 
ধারাবাহিকতার 
অভাব , প্রতিভার  অপচয়  আর 
ম্যাচ  পাতানো  কেলেঙ্কারি 
মিলিয়ে  থমকে  দাঁড়ায় 
আশরাফুলের  ক্রিকেট  ক্যারিয়ার । বাংলাদেশের  বহু 
জয়ের  এই  কান্ডারি 
হারিয়ে  ফেলে  তার  পথ
। বাংলাদেশ  হারায়  তাদের 
প্রিয়  আশরাফুলকে । তবে  শাস্তি 
কাটিয়ে  আবারও  দেশকে কিছু 
দেওয়ার সুযোগ  রয়েছে  তার সামনে । বাংলাদেশের  ক্রিকেটপ্রেমীরা  আজও 
বিশ্বাস  করে  আবারও 
ফিরে  আসবেন  তাদের 
প্রিয় “ আশার ফুল” । হাল 
ধরবেন  দলের , দক্ষ  নাবিকের 
মতই  দেশকে  পৌছে 
দিবেন  জয়ের  বন্দরে । 
১৯৮৪  সালের  ৭ ই  জুলাই  জন্ম  নেওয়া  আশরাফুলের  ৩৩ তম  জন্মদিনে  তার  জন্য রইল  শুভকামনা । পথ  হারানো  এই  পথিকৃৎ  যেন আবারো  খুঁজে  পান  তার  পথের  দিশা , কোটি  বাঙালির  প্রার্থনাকে  সত্য  করে  যেন আবারো  ফিরে  আসেন  ক্রিকেট  মাঠে  এই  কামনায় উদযাপিত  হোক  তার জন্মদিন ।
শুভ  জন্মদিন  ,  আশরাফুল......
তথ্যসূত্রঃ




 
 
Comments
Post a Comment