THE JOURNEY OF NEWS




খবর পৌছানোর রেওয়াজটা বিশ্বে প্রথম শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময়কালে। মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ড (ল্যাটিন ভাষায় যাকে বলা হয় অ্যাক্টা ডিউরনা) একটা পাথরের উপর খোদাই করে  রেখে দেওয়া হত জনবহুল জায়গাগুলোতে। এতে করে সাধারণ মানুষ এই ঘটনাগুলো জানার সুযোগ পেত। একই সময়ে চীনেও শুরু হয় খবর পৌছানোর এই রীতি। চীনের সরকার আঞ্চলিক শাসকদের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় খবরগুলো (চীনা ভাষায় যাকে বলা হয় দিবাও) সরবরাহ করত। এই খবরগুলোর কিছু অংশ আবার পৌছে যেতো সাধারণ মানুষদের কাছে। হাজার বছরের এই রীতিতে পরিবর্তন আসে এক জার্মানের হাত ধরে। ইয়োহান গুতিনবার্গ প্রথম আবিষ্কার করেন ছাপানোর যন্ত্র। তিনি এই যন্ত্রের নাম দেন দ্যা প্রিন্টিং প্রেস। ১৪৫৪ সাল থেকে তিনি এই যন্ত্র ব্যাবহার করা শুরু করেন । এক বছরের মাথায় তিনি বাইবেলকেপুস্তক আকারে প্রকাশ করেন। গুতেনবার্গের আবিষ্কারের মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন আসে সংবাদ প্রকাশের রীতিতে।



দ্যা বোস্টন সানডে
গুতেনবার্গের  পদ্ধতিটা ছিলো দ্রুত , সহজ এবং সবার জন্য উপোযোগী। তবে ক্ষমতাটা ছিলো সরকারের হাতেই কারণ তারাই নিয়ন্ত্রণ করত কী ধরণের লেখা প্রকাশ করা যাবে। ১৬২০ সালে ইউরোপে Corantos নামে একপাতার একটি সংবাদপত্র প্রকাশ করা হয় । যুদ্ধ আর মজার মজার বিভিন্ন খবর নিয়ে সাজানো হয় এই পত্রিকাটি। তবে প্রশাসন কেবল ওই বিষয়গুলোই প্রকাশ করতে চাইত যেই বিষয়গুলো সরকারকে সাহায্য করবে এবং জনগণের কাছে তাদেরকে ভালোভাবে উপস্থাপন করবে। ১৬৪৪ সালে বিখ্যাত ইংরেজ কবি জন মিল্টন প্রকাশ করনে Areopegiticaএর মাধ্যমে তিনি সংবাদ প্রকাশে স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে আনেন। মিলটনের এই ধারণা আধুনিক সংবাদপত্রের কাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।ইংল্যান্ডের সবচাইতে পুরোনো পত্রিকা The Oxford Gazzete  এর যাত্রা শুরু হয় ১৬৬৫ সালে। লন্ডনের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের কথা প্রায় এক বছর পর এই পত্রিকার মাধ্যমে মানুষের সামনে উঠে আসে। এই সংবাদপত্রটি এখনও চাইলে আপনি পড়তে পারবেন । আমেরিকার প্রথম সংবাদপত্রের নাম Public Occurencesএই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় ১৬৯০ সালে, বোস্টনে । এই পত্রিকাটি ছিলো চার পাতার এবং প্রতিমাসে এটি একবার করে প্রকাশের চিন্তাভাবনা করা হয়। কিন্তু প্রথমবার প্রকাশের পরপরই সরকার এই পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে ।


১৬৯০ সালের আগ পর্যন্ত সংবাদপত্রের প্রধান ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সংবাদ প্রকাশে স্বাধীনতা তৈরি হতে থাকে। ১৮শ শতকেও সংবাদপত্রের প্রধান ক্ষমতা ছিলো সরকারের হাতে। ১৭৭২ সালে ইউ.এস.এ তে তরুণ বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন দ্যা নিউ ইংল্যান্ড কোরান্ট পত্রিকার এডিটরের দায়িত্ব নেয়। কারণ প্রশাসন তার বড় ভাইকে সংবাদ জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। ১৮শ শতকের শেষদিকে মানুষ প্রেসের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা শুরু করে। আইরিশ পলিটিসিয়ান, এডমন্ড বার্ক তার এক বক্তব্যে সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিককে "থ্রি এস্টেটস" নামে অভিহিত করেন এবং চতুর্থ এস্টেটসটির নাম দেন সাংবাদিকতা।


১৮'শ শতকের একটি ছাপাখানা

১৭৯১ সালে আমেরিকার সংবিধানে কিছু সংশোধন আসে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রেসের স্বাধীনতা। এই নিয়মটির মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে সরকারের হস্তক্ষেপ অনেকাংশে কমে আসে। ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কমে আসলেও ঊনিশ শতকের বেশিরভাগ পত্রিকাই পক্ষপাতদুষ্ট। বেশিরভাগ পত্রিকাই ছিলো ওয়ান সাইডেড এবং তাদের পাঠকরাও ছিলো তাদের ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী। সত্য এবং সঠিক  খবর প্রকাশের অঙ্গীকার নিয়ে ১৮৩৫ সালে পথচলা শুরু হয় The Newyork Herald পত্রিকার। এই পত্রিকাটির লক্ষ্য ছিলো রাজনৈতিক প্রভাববিহীন খবর প্রকাশ করা। ১৮৫০ সালে সংবাদপত্রের পরিধি স্থানীয় পর্যায় ছাপিয়ে জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে পৌছায়। টেকনোলজির উন্নতির কারণে সংবাদপত্রের প্রসার বহুগুণ বেড়ে যায়।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয় নতুন মাত্রা । ওই সময়ে প্রথম শুরু হয় অনুসন্ধানী খবর প্রকাশ। এই ধরণের সংবাদ প্রকাশে বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি এবং প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিদের পর্যবেক্ষন করার জন্য তাদের পেছনে একজন করে সাংবাদিক নিযুক্ত করা হত।এই ধরণের খবর প্রকাশের কারণে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সংবাদপত্রগুলো।মানুষের চোখে ধরা পরে তার আশপাশে ঘটে যাওয়া নানা অজানা ঘটনা। 

১৯২০ সালে প্রচলন হয় রেডিওর মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ। এতে করে দূরদূরান্তে পৌছে যায় সংবাদ। সংবাদ পড়ার পাশাপাশি সংবাদ শোনাতেও সমান আগ্রহী হয় মানুষ। ১৯৫০ সালে শুরু হয় টেলিভিশনের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ। টেলিভিশনের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ আরও বাড়িয়ে দেয় মানুষের জানার সুযোগ। টিভি পর্দায় খবর শোনার পাশাপাশি খবর দেখারও সুযোগ মিলে সবার। টেলিভিশনের মাধ্যমে খবর প্রকাশের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হল লাইভ টেলিকাস্টিং। এর মাধ্যমে পৃথিবীর নানা প্রান্তের খবর সরাসরি এবং তাৎক্ষণিকভাবে পৌছে সারা বিশ্বের অগণিত দর্শকের কাছে। 

খবর পৌছানোর গতিকে সবচাইতে বেশি তরান্বিত করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা ইন্টারনেট। ১৯৯০ সালের দিকে শুরু হয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ। ইন্টারনেটের বদৌলতে সারা বিশ্বের কোটি কোটি সংবাদ পাঠকের মোবাইল কিংবা কম্পিউটার স্ক্রিনে হাজির হতে থাকে সংবাদ। আর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায় । এক জরিপে দেখা যায় - আমেরিকার অর্ধেক মানুষই তাদের সংবাদের জন্য ফেইসবুক কিংবা টুইটারের উপর নির্ভরশীল। 

এইভাবে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেটের উদ্ভাবন আর নতুন নতুন প্রযুক্তির হাত ধরে  প্রসারিত হতে থাকে সংবাদ প্রকাশের গতি। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই তাদের প্রয়োজনীয় সংবাদের জন্য নির্ভর করে ইন্টারনেটের উপর। কিন্তু সংবাদকে মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তোলার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা অনিস্বীকার্য। সারা বিশ্বের নিঃস্বার্থ কিছু মানুষের দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে আজকের এই পর্যায়ে পৌছায় সংবাদপত্র, লাভ করে সত্য প্রকাশের স্বাধীনতা , খুলে দেয় অজানাকে জানার এক নতুন দুয়ার। 

Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!