একটি আপেল ও থিওরি অফ গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স
![]() |
স্যার আইজ্যাক নিউটনের আপেলের গল্পটা আমরা সবাই ছোটবেলা থেকেই জানি। এটা বিজ্ঞানের
ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনীগুলোর একটি। যে কাহিনীটি সবচেয়ে প্রচলিত সেটি হল, “একদিন
স্যার নিউটন একটা গাছের নিচে বসে ছিলেন। তো হঠাৎ করে একটা আপেল তাঁর মাথার উপর
পড়লো। আর তারপরই দারুণ একটি চিন্তা খেলে গেলো তাঁর মাথায়, আর আবিষ্কৃত হলো “থিওরি
অফ গ্র্যাভিটি”। কে জানতো! এই একটি আপেলই পৃথিবীকে বদলে দিবে।

১৬৬৬ সাল।
প্লেগের মহামারীতে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, নিউটনকে তখন কেমব্রীজ ছেড়ে দিতে হয়।
সেখান থেকে তিনি লিঙ্কনশায়ারে চলে যান। তিনি প্রায়ই খুব চিন্তিত থাকতেন, ভাবতেন
কিভাবে চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে, যেখানে যেকোন কিছু পৃথিবীতে ফিরে চলে আসে
অদৃশ্য কোন টানে। আপেলকে যেভাবে সোজাসুজি মাটিতে পড়তে দেখলেন, সেভাবে নিশ্চয়ই
চাঁদেরও পৃথিবীর সাথে মিশে যাওয়ার কথা। এই অদৃশ্য টানটাই হলো “গ্র্যাভিটি”।
এখন
অল্পকিছুক্ষণ বাচ্চা-লেভেলের পদার্থবিজ্ঞান কপচানো হবে। (কিছু করার নাই...)
নিউটনের
চিন্তার খোরাক দেওয়ার মতো জিনিসেরও অভাব ছিল না তখন। গ্র্যাভিটির প্রভাব নিশ্চয়ই
বিশাল দূরত্ব পর্যন্ত থাকবে। অনেক বছরের গবেষণার পর, অনেক অনেক গাণিতিক
হিসাব-নিকাশ করে তিনি বের করলেন,
“অভিকর্ষ বল দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতে
কমতে থাকে”
এর থেকে
তিনি এই সিদ্ধান্তেও আসেন যে, যে বলের
প্রভাবে আপেল সোজাসুজি ভূমিকে স্পর্শ করে ঠিক একই বলের প্রভাবে চাঁদও পৃথিবীকে
প্রদক্ষিণ করে। এবং এই বলই হলো, “গ্র্যাভিটি” বা অভিকর্ষ। তাঁর তত্ত্বমতে, এ মহাবিশ্বের যা কিছুর ভর আছে, তাঁর
প্রত্যেকটিরই স্ব স্ব অভিকর্ষ বল আছে যেটা সেই বস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ ক্ষেত্রের
মধ্যে বিদ্যমান। যখন একটি ভর তাঁর নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করে, সে তাঁর অভিকর্ষ
ক্ষেত্রকেও নিজের সাথে নিয়ে যায়। এ কথার মানে হচ্ছে, এ মহাবিশ্বের অভিকর্ষ ক্ষেত্র
ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে, যার ফলাফল হিসেবে অভিকর্ষ বলও পরিবর্তিত হচ্ছে।
চাঁদের পৃথিবীকে
প্রদক্ষিণ করাকে আমরা এই ছোটখাটো থিওরি দিয়ে বুঝতে পারি।
যখন কোন
নির্দিষ্ট ভরের বস্তুকে নিক্ষেপ করা হয়, সেটি উপবৃত্তাকারে আবার পৃথিবীতে ফিরে
আসে। এটার কারণ এতক্ষণে বেশ কয়েকবার বলে ফেলা হয়েছে। যে ত্বরণের প্রভাবে বস্তুটি
পৃথিবীতে ফিরে আসে সেই একই ত্বরণ কিন্তু চাঁদের উপরও বিদ্যমান। কিন্তু চাঁদ তো আর
কোন ছোট-খাট বস্তু না! (আকারে পৃথিবীর প্রায় ২৭%) । তো চাঁদেরও নিজস্ব অভিকর্ষ বল
আছে। এই দুটি বল সহজ বাংলায় একে অপরের সাথে কাটাকাটি যেয়ে যা থাকে, সে বলের
প্রভাবেই চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এখানে আরো অনেক প্রভাবক আছে। পৃথিবীও
নিজের অক্ষে ঘুরছে, এখানেও কেন্দ্রবিমুখী বল কাজ করছে।
এবার একটা
ছোট্ট এক্সপেরিমেন্টের কথা বলি।

“মহাবিশ্বের
প্রত্যেক বস্তুই একে অপরকে আকর্ষণ করছে। এ আকর্ষণ বল দুটি বস্তুর কেন্দ্রের
সংযোগকারী সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে। এই আকর্ষণ বল বস্তু দুটির ভরের সমানুপাতিক
এবং দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।“
৫ই জুলাই,
১৬৮৬ সাল। নিউটন তাঁর এ থিওরি, “Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica” বইয়ে প্রকাশ করেন। যদিও তাঁর
গতি এবং ক্যলকুলাসের আরো কিছু থিওরিও ছিল। আজ এই তত্ত্ব প্রকাশের ৩৩১ বছর হল। যদিও
অনেকে এটি ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। (এখানে একটি আর্টিকেল
আছে, নিউটন ও আইনস্টাইনের থিওরিকে চ্যালেঞ্জ করা নিয়ে) যদি কখনো এটি ভুল প্রমাণিতও
হয়, তারপরেও পৃথিবী বদলে দেওয়া এ থিওরি এ মহাবিশ্ব টিকে থাকার শেষদিন পর্যন্ত থাকবে।
![]() |
১৬৮৬ সালের ৫ জুলাই প্রকাশিত হওয়া “Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica” এর প্রচ্ছদ। এটাতেই প্রথম “Law of Universal Gravitation” বর্ণিত হয়। |
তথ্যসূত্রঃ
Comments
Post a Comment