সবুজ ক্যানভাসে তুলির আঁচড় ও ১৩ ই জুলাই

File:Fifa world cup org.png
 ফিফা বিশ্বকাপ 


বিশ্বকাপ ফুটবল!!! প্রতি চার বছর পর পর  নানা রকম রঙ, চমক আর উদ্দীপনা নিয়ে হাজির হয় বিশ্ব ফুটবলের এই আসর। গোটা এক মাস সব কাজ ফেলে জমজমাট এক ফুটবল যুদ্ধে বুঁদ হয়ে থাকে সারা বিশ্ব। মাঠে চলে ফুটবলের প্রদর্শনী আর মাঠের বাইরে শুরু হয় মুখের লড়াই। তর্ক বিতর্কে ভরে ওঠে সংবাদপত্রের পাতা, ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। জন্ম নেয় নানা রেকর্ড আবার মুছে যায় আগের রেকর্ড। কারো হাসি, কারো কান্নায় এগিয়ে যায় ফুটবলের এই মহারণ। শিরোপা ওঠে একটি দলের হাতে। চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় সারাবিশ্ব।

ফুটবল বিশ্বকাপের শুরুটা হয় ১৯৩০ সালের ১৩ই জুলাই। ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলস রিমেট আন্তর্জাতিকভাবে ফুটবলের একটি টুর্নামেন্ট করার কথা ভাবেন। তারই ফল এই ফুটবল বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরে অংশ নেয়া দলের সংখ্যা মাত্র ১৩। ইতালি, সুইডেন, নেদারল্যান্ড, স্পেন, হাংগেরি ও উরুগুয়ে সকলে আবেদন করলেও ওই আসরে ফিফা আয়োজক হিসেবে নির্ধারন করে উরুগুয়েকে। উরুগুয়েকে আয়োজক হিসেবে নির্ধারন করার প্রধান কারণ ছিল দুইটি প্রথমত ১৯৩০ সালটি ছিল তাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি। এছাড়াও তারা ছিল ১৯২৮ সালের সামার অলিম্পিকের বিজয়ী দল। সবগুলো খেলাই অনুষ্ঠিত হয় উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওতে।

                                       1930 World Cup Final Ball Uruguay
                                                      ১৯৩০ ফিফা বিশ্বকাপের বল by Oldelpaso


বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম মোকাবিলায় জয় পায় ফ্রান্স ও ইউনাইটেড স্টেটস। ফ্রান্স মেক্সিকোর বিপক্ষে জয় তুলে নেয় ৪-১ গোলের ব্যাবধানে আর ইউনাইটেড স্টেটস বেলজিয়ামকে হারায় ৩-০ তে।

অর্থনৈতিক দুর্যোগের কারণে ইউরোপের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই দ্বিধায় ছিল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা নিয়ে। ফলে ইংল্যান্ড, ইতালিস্পেন, জার্মানি আর হল্যান্ড এর মত বড় বড় দলগুলোর অংশ নেয়া হয়নি প্রথম বিশ্বকাপে। আয়োজক দেশ উরুগুয়ে তাদের যাতায়াত খরচ দেওয়ার কথা জানালে, ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলস রিমেট ফ্রান্স, বেলজিয়াম, রোমানিয়া ও যুগোস্লোভিয়াকে এই টুর্নামেন্টে খেলানোর ব্যাপারে রাজি করাতে সক্ষম হন। রোমানিয়ার রাজা কার্লো নিজ উদ্যোগে খেলোয়াড় বাছাই করেন এবং তাদের তিন মাসের ছুটি মঞ্জুর করেন। খেলা শেষে আবার চাকরির আশ্বাসও দেন তিনি।

ওই টুর্নামেন্টে উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার খেলা সকলকে মুগ্ধ করে। এছাড়াও ফ্রান্স ও ইউ.এস.এ ছিল এই টুর্নামেন্টের শক্তিশালী দল। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম গোলটি আসে ফ্রান্সের লুসিয়ান লরেন্ট এর পা থেকে। ফ্রান্সের দ্বিতীয় খেলাটি হয় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। বিতর্ক তৈরি হয় ঐ ম্যাচটি ঘিরে। রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে খেলা শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগেই বন্ধ হয়ে যায় ম্যাচটি। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জন্টিনা । ইউ.এস.এ কে ৬-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে  পৌঁছে আর্জেন্টিনা।ফাইনালে মুখোমুখি হয় টুর্নামেন্টের সবচাইতে শক্তিশালী দুই দল উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনা । ৯৩০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারায় উরুগুয়ে।

এরপর একে একে অনুষ্ঠিত হয় ফিফার ২০টি আসর। প্রতি ৪ বছর অন্তর অন্তর এই আসর মানুষের কাছে নিয়ে আসে ফুটবলের আগমনী বার্তা। ফিফার সর্বশেষ আসরটি বসে ব্রাজিলে। জমজমাট ওই আসরে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে মেসির আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। আগামী বছর ফুটবলের এই মহোউৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাশিয়ায়। কি হতে যাচ্ছে সেই আসরে? কার মাথায় উঠবে বিশ্বসেরার মুকুট? উত্তর জানতে হলে অপেক্ষায় থাকুন...... ফুটবল সময়মত হাজির হবে আপনার টিভির পর্দায়!!!

Bastian Schweinsteiger celebrates at the 2014 FIFA World Cup
                        ২০১৪তে বিজয়ী জার্মানির বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার হাতে বিশ্বকাপ by Marcello Casal 

Comments