নিবিড়ের গল্প (পর্ব- ৫ )
আগের পর্ব - নিবিড়ের গল্প (পর্ব চার )
ঝিম ঝিম বৃষ্টির শব্দ ।
আজ সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি পড়লে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে অনেক মজা ।
নিবিড় অন্যান্য সময় ফ্যান ছেড়ে দিয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমায় । বৃষ্টির এই একটা দিকই
তার ভাল লাগে ।অবশ্য বৃষ্টি তার খুব বেশী পছন্দ না । কারন একটাই এলাকায় অল্প
বৃষ্টিতেই পানি উঠে যায়। রাস্তা ঘাটের পানি নর্দমার ময়লা পানিতে মিশে একাকার হয়ে
যায়।যাতায়াতে খুব সমস্যা হয় আর রিকশাভাড়াও আকাশ্চুম্বী হয়ে যায়। বৃষ্টিকে অপছন্দ
করার আরোও একটা কারন আছে তার।
স্কুলের ছুটিতে গ্রামের
বাড়িতে গিয়েছিল সে। বর্ষাকাল। সকালবেলা মাছ ধরার জন্য তার ছোটচাচার সাথে জাল নিয়ে
বের হল । বন্যার সময় পুকুরের মাছ পুকুর থেকে চলে যায় ।আশেপাশের ধান ক্ষেতেই ছোট
ছোট মাছ পাওয়া যায়। নিবিড় এর হাতে একটা বিশাল পাতিল ।ছোটচাচার হাতে জাল। মাছ ধরতে
ধরতে তারা পুকুরের পাশে এসে পড়ল। দুটো পুকুর পাশাপাশি, মাঝখানে একটা রাস্তা। নিবিড়
ঐখানে আগে কখনো আসেনি। একটা জায়গায় এসে নিবিড়ের মনে হল যে তার পায়ের নিচে মাটি নেই
। ছোট চাচা দেখে নিবিড় হাবুডুবু খাচ্ছে। জাল ফেলে দিয়ে ভাইপোকে বাঁচাতে লাফ দিল
সে।
বিছানায় উঠে বসল
নিবিড়।ঘুম থেকে উঠে তার প্রথম কাজ হয় চশমা খোজা। রাতে ঘুমানোর আগে কই চশমা রেখেছিল
মনে করতে পারছেনা সে।শেষে কি মনে করে বালিশের নিচে হাতাল। প্লাস্টিকের ফ্রেমের
চশমা। চাপে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। চশমা চোখে দিয়ে জানালায় তাকাল সে । বিল পানিতে
টইটুম্বুর। তার মানে এলাকায় ভালই পানি উঠেছে।
টেবিলের দিকে তাকাতেই ছ্যাঁত করে উঠল তার মনে। রাতে ঘুমানোর সময় জানালা খোলা রাখা ছিল । টেবিল জানালার
পাশেই। টেবিলে কোন বই নেই। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। টেবিলে একটা হলুদ রং এর
পাতা।বৃষ্টির পানিতে ভিজে চুপসে আছে। ছোটমামার দেওয়া কবিতাটা এই খাতায় এ লিখেছিল
সে। নিবিড়ের যতটুকু মনে পড়ে সে কাগজটা বই এর ভেতর রেখেছিল। তাহলে কে বের করল আবার।
“কিরে কতক্ষন ঘুমাবি আর ?”, ছোটমামার ডাক শুনেই
নিবিড়ের মনে পড়ল মামার হাতের লেখা
কাগজটা কিন্তু ঠিকই আছে ।
মূহুর্তেই মন ভাল হয়ে গেল তার ।
মোবাইলের অ্যালার্মের আওয়াজে ঘুম
ভাঙল তপুর ।অবশ্য এটার আগে আরোও পাঁচবার
অ্যালার্ম অফ করেছিল সে । মোবাইলে দেখল এগারটা বাজে । আজ তার বাজার করতে
হবে । মীমের জন্মদিন , তাই বাসায় অনেক কাজ
। সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে , তাই বুয়াও আসবে না । চাচীর উপর অনেক চাপ পরবে । চাচী
মাঝে মাঝে দুঃখ করে তপুকে বলে “আজ তোর মা বেচে থাকলে আমার এত কষ্ট হত না ”, তখন খুব খারাপ লাগে তপুর ।
নাস্তা খেয়ে পড়তে বসল নিবিড় । আজ স্কুলে যাওয়া
হবেনা । ময়লা পানিতে পা ভেজাতে ইচ্ছে হছে না তার । বিকেল করে মীমের বাসায় দাওয়াত ।
তাই রাতে আর পড়া হবে না ।
নিবিড় সাধারনত বাবার সাথে কম কথা বলে। সপ্তাহে
দুই কি একদিন মোবাইলে কথা হয়। কারন একটাই তার বাবা গম্ভীর সভাবের। কিন্তু একবার কথাবলা
শুরু করলে (বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা) থামতে চায় না সে। পড়াশোনা আর খাওয়া দাওয়া
ছাড়া অন্য কোন কিছু নিয়ে কথা হয়না তার সাথে। নিবিড়ের অনেক কিছু নিয়ে তার বাবার সাথে
কথা বলতে ইচ্ছা করে। কিন্তু সে করেনা। কেউ যদি নিজের থেকে তার দিকে এগিয়ে না আসে তবে
সে ও তার দিকে যায় না। অবশ্য তিন চার বছর আগেও এমন ছিলনা বাবা। বাবার সাথে খুব ভাল
আড্ডা হত তার। এক বসাতেই দুই তিন ঘন্টা পার করে দিত বাপ ছেলে। নিবিড়ের মা এসে বলত
,"হয়েছে আমার ছেলেটা কে এখন ছুটি দাও ।"
বাবা বদলী
হওয়ার পর অনেক বদলে গেছে। পরিবেশ আর পরিস্থিতি মানুষকে বদলিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি।
আজ কেন জানি বাবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে তার।বাবা
অনেক কষ্ট করেছে জীবনে । পরিবার থেকে দূরে থাকলে অনেক কষ্ট এটা নিবিড় বুঝে।
গোসল করে বারান্দায় গেল নিবিড়। ছোটমামা চেয়ারে
বসা। ছোটমামার সাথে নিবিড় অনেক সাচ্ছন্দ বোধ করে। এমনকি তার মার কাছ থেকেও অনেক কিছু
লুকায় কিন্তু মামার থেকে না।
-কি করছ মামা?
-কিছুনারে। আজকে তোকে নিয়ে বের হব ভাবছিলাম।
-কখন?
-আপা বল্ল আজ নাকি কোথায় দাওয়াত আছে, হালিমা আপার
বাসায়।
-ওহ হ্যা, মীমের জন্মদিন আজ।
-ওহ আচ্ছা। কবিতাটা এজন্যই ?
নিবিড় কিছু বললনা, মামা তার মুখের হাসি দেখেই বুঝে
নিল ।
-আচ্ছা মামা তুমি লেখালেখি ছেড়ে দিলে কেন?
-এক প্রশ্ন কয়বার করবি?
- তুমি কোন পয়েন্টে আসনাই তাই।
-জানিস বাংলাদেশের সমস্যা কি? , এখানে সবাই আঁতেল
,সবাই
কবি, সবাই সন্যাসী সবাই সব কিছুতে পারদর্শী!"
মামার চোখে মুখে
বিরক্তির ছাপ। মামার কথা শুনে হাসল নিবিড়। আসলেই ঠিক বলেছে মামা। ইদানীং দেশে কাক আর
কবির সংখ্যা সমহারে বাড়ছে ।
মীমের
বাসা আজ খুব ভাল ভাবেই সাজানো হয়েছে । বিকেলে তার
বান্ধবীরা এসেছে বাসায় । সবাই ই কিছুনা কিছু এনেছে তার জন্য ।
সন্ধার
দিকে নিবিড় আসল। তার সাথে তার মামা আর মা। ছোটমামা আসতে চাচ্ছিলনা । জন্মদিন তার ভাল্লাগেনা।
এমনকি তার জন্মদিন এর দিন ফেসবুক ডিএক্টিভ করে রাখে সে, যেন কেউ উয়িস করতে না পারে।
নিবিড় এর হাতে রংগিন কাগজে মোড়া একটা বই ।
মীমের সাথে অনেক ফ্রি নিবিড়। কিন্তু আজ তার পাশে
এতগুলো বান্ধবী দেখে লজ্জা পাচ্ছে সে। মীম এগিয়ে আসল নিবিড়ের দিকে। হাত থেকে বইটা নিল।
-তোর থেকে
আরোও ভাল কিছু আশা করছিলাম। বই তো আমি কম পড়ি জানিস তো।
- খুল্লে
বুঝতে পারবি।
এটুকু
বলেই নিবিড় অন্যদিকে চলে গেল । তার আচরনে মীম কিছুটা অবাক হল। নিবিড়কে অনেক ছোটবেলা
থেকেই সে চিনে । মেয়েদের সামনে নিবিড় লজ্জা পায় তা সে ভালভাবেই
বুঝে। কিন্তু আজ কেন জানি অন্যরকম লাগছে তার ব্যবহার।
মোটামুটি
সব মেহমান ই চলে এসেছে। একটু পরেই কেক কাটা হবে।এতগুলো মানুষের মাঝে নিবিড় তপুকে খুজে
পেলনা । কি মনে করে সামনে রুমে গেল সে।
তপুকে দেখল নিবিড়।
বিছানায়
ঘুমাচ্ছে সে।
(চলবে)
Comments
Post a Comment