টেস্ট ক্রিকেটের নতুন সদস্য আফগানিস্তান
২০০৬ সালে
ওডিআই স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০৭ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই সবাইকে চমকে দেয়
আয়ারল্যান্ড।পাকিস্তানের পর বাংলাদেশকেও হারায় তারা।পরের ২০১১ বিশ্বকাপে শক্তিশালি
ইংল্যান্ডের সাথে ৩০০ রান তাড়া করে জিতে আবারো নিজেদের সামর্থ্যের প্রমান দেয়
আয়ারল্যান্ড।সাম্প্রতিক সময়ে আইসিসির সহযোগি দেশ গুলোর মধ্যে আয়োজিত টুর্নামেন্টে
খুব একটা সাফল্য পায়নি তারা,এর বড় কারন আফগানিস্তান।ফলে আয়ারল্যান্ড দীর্ঘদিন
বিবেচনায় থাকলেও আফগানিস্তানকেও একই সাথে সদস্যপদ দিতে সম্মতি দেয় অন্য সদস্যরা।
ইতিহাস থেকে
পাওয়া যায় ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশদের সাথে কাবুলে প্রথম একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল
আফগানিস্তানের বাসিন্দারা।১৯৯০ সালের পর থেকেই আফগানিস্তানে জনপ্রিয় হতে শুরু করে
ক্রিকেট।১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়ের পর তা কয়েকগুন বেড়ে যায়।তালিবানরা
শুরু থেকেই ক্রিকেটকে নিষেধ করে দিয়েছিল।সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ১৯৯৫ সালে আফগানিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড গঠিত হয়।পরের বছরই আইসিসি থেকে ক্রিকেট খেলুড়ে শাখা দেশের
স্বীকৃতি পায় আফগানিস্তান। ঐ বছরই পাকিস্তানের দ্বিতীয় বিভাগ লিগে খেলার সুযোগ পায়
তারা। ৫টি ম্যাচের ২টি ড্র করতে সক্ষ্ম হয় তারা।
২০০৪ সালে
প্রথম এশিয়ার আঞ্চলিক টুর্নামেন্টে খেলার সু্যোগ পায় তারা,এসিসি ট্রফির সেই আসরে ৬ষ্ঠ স্থান অর্জন করে।২০০৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে
৭টির মধ্যে ৬টিতেই জয় পায় তারা।বিভিন্ন কাউন্টি দলের দ্বিতীয় সারির দল গুলোর সাথে
এই জয় পায় আফগানিস্তান।২০০৭ সালে ফাইনালে ওমানের সাথে টাই করে এসিসি টি২০ টুর্নামেন্ট জিতে প্রথম কোনো শিরোপা
জিতে আফগানিস্তান। ২০০৯ সালের পরবর্তি আসরে আরব আমিরাতকে হারিয়ে একক ভাবেই এই
শিরোপা জিতে নেয় তারা।পরের বছর স্কটল্যান্ডের সাথে প্রথম আন্তর্জাতিক টি২০ খেলে
তারা যেখানে ৫ উইকেটে পরাজিত হয় তারা।২০১০ সালেই আরব আমিরাতকে হারিয়ে ২০১০ টি২০
বিশ্বকাপে অংশগ্রহনের সুযোগ পায় ।একই দিনে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ালিফাইং
রাউন্ডের শিরোপা জিতে তারা।
ভারত ,দক্ষিন
আফ্রিকার সাথে হেরে ২০১০ টি২০ বিশ্বকাপ শেষ হয় আফগানিস্তানের।২০১৪ সালের আসরে হংকং
ও নেপাল এবং ২০১৬ সালের আসরে মুল পর্বে পরবর্তীতে শিরোপা জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে
হারায় তারা।২০১১ ওডি আই বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে হেরে মূল পর্বে উঠতে ব্যর্থ
হলেও একদিনের ম্যাচ খেলার স্বীকৃতি পায় তারা।২০১২ সালে শারজাহতে পাকিস্তানের সাথে
প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তারা। একই বছর আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার সাথে একটি ম্যাচ খেলে তারা।২০১৩
সালের ২৭ জুন সহযোগী দেশ হেসেবে স্বীকৃতি পায় আফগানিস্তান।২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ে
সফরের মাধ্যমে প্রথম কোন পূর্ণ সদস্যের দেশ সফর করে তারা।৪ ম্যাচের সিরিজটি ২-২এ
ড্র হয়েছিল।২০১৫ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে অংশ নেয় তারা।নিজেদের প্রথম ম্যাচে
বাংলাদেশের কাছে ১০৫ রানে হারে।স্কটল্যান্ডকে ১ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে তাদের
প্রথম ম্যাচ জিতে নেয় আফগানিস্তান।সেইবার আর কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি তারা।
২০১৫ বিশ্বকাপের পর
জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ৩-২ এ সিরিজ জিতে নেয় আফগানিস্তান।একই সাথে ২৫ ডিসেম্বর ,২০১৫
তে প্রথম বারের মত জিম্বাবুয়েকে টপকে ওডিআই র্যাঙ্কিনে ১০ এ উঠে আসে তারা।পরবর্তীতে
বিভিন্ন সিরিজেও সহযোগি দেশ গুলোর সাথে জিতে চলে তারা।২০১৬ সালে বাংলাদেশকেও
হারিয়ে দেয় একটি ম্যাচে ,পরে ২-১ ব্যবধানে সিরিজটি জিতে বাংলাদেশ।২০১৭ সালে
স্কটল্যান্ডের সাথে ৩-২ এ ওডিআই এবং ৩-০ তে টি২০ সিরিজ জিতে।সম্প্রতি জুনে ওয়েস্ট
ইন্ডিজকেও টি২০তে ৩-০ ব্যবধানে হারায় তারা।প্রথম ম্যাচে জিতে একদিনের সিরিজটিও ১-১
এ ড্র করে তারা।
আসগর স্ট্যানিকজাইএর নেতৃত্বে থাকা দলটার বর্তমান কোচ ভারতের লালচাঁদ
রাজপুত।দলটিতে আছে
নবীর মত বিশ্বমানের অলরাউন্ডার,রশীদ খানের মত লেগ স্পিনার।সম্ভাবনাময় দলটা সামনে
এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত।যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটিতে ক্রিকেটের এই সাফল্য বেশ উন্মাদনা শুরু
করেছে।টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার মাধ্যমে যা
বেড়েছে কয়েকগুন। অন্যান্য সহযোগী দেশ
গুলো আফগানিস্তান থেকে খুঁজে নিতে পারে অনুপ্রেরণা।এখন পর্যন্ত ৮৩টির মধ্যে ৪২টি
একদিনের ম্যাচ এবং ৬২টি টি২০এর মধ্যে ৩৯টিতে জয় পেয়েছে তারা।ক্রিকেটের আদি সংস্করনটিতে
আফগানিস্তান কেমন করে তারই অপেক্ষা এখন।
Comments
Post a Comment