ছুটে যাই বাঁশবাড়িয়ায়!

সমুদ্রের সাথে মানুষের সম্পর্ক অনেকটা আত্মিক। সুযোগ পেলেই সমুদ্রের ধারে ছুটে যেতে কারই না মন চায়!! সমুদ্র মানেই  পানিতে দাপাদাপি করা, ঢেউয়ের তালে নিজেকে ভাসিয়ে দেয়া, খেলাচ্ছলে ঢেউ আসলে তার সাথে লাফিয়ে ওঠা, আরো কত দুষ্টুমি। সমুদ্র মানেই বিশালতা, প্রকৃতির এক অবারিত দুয়ার।


আজ আপনাদের নিয়ে নিয়ে যাব এমনই এক সমুদ্রপাড়ে, যার নাম বাঁশবাড়িয়া সৈকত।




চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগরের যে কয়টি সমুদ্রপাড় রয়েছে, তার মধ্যে বাঁশবাড়িয়া সৈকত অন্যতম। বাঁশবাড়িয়া সৈকতের শুরুতেই রয়েছে বেড়িবাধের মত, যার উপরে হেটে নামতে পারা যাবে সমুদ্রতীরে। বেড়িবাধের উপর হাটতে হাটতেই শুনতে পারা যাবে দূরের সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন, সমুদ্রের ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার শব্দ। আর দূর থেকে দেখতে পারা যায় বিশাল সমুদ্রের অসীম দিগন্ত। শুধু তাই নয়, সমুদ্রের অপরদিকে, মানে বেড়িবাধের অপর পাশে তাকালেই অবাক হতে হয় আরেক বিশালতায়। দূরের সীতাকুন্ডের বিশাল সবুজের নীলাভ পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে, আকাশ মিশেছে তার চূড়ায়। এ যেন প্রকৃতির উদারতার এক মহামিলন।




বেড়িবাধটুকু পার হলেই শুরু হয়ে যাবে বীচ। বীচের পূর্ব দিকে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ঝাউবাগান। আর  বাধ থেকে কিছুটা দক্ষিণে গেলেই বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট পড়বে। এখানে পানির উপরে  একটি ব্রীজ দেখা যাবে, যা লম্বায় আধা কিলোমিটার লম্বা। ব্রীজের উপরে হেটে সমুদ্রের পানির উপরে বেশ কিছুটা দূরে যাওয়া যায়। সমুদ্রের পানির উপরে হেটে যাওয়া, আহা কি আনন্দ!

বাঁশবড়িয়া বীচের প্রধান আকর্ষণ এখানকার নীরবতা। আর এর জন্য যেতে হবে বীচের কিছুটা পূর্বে, বেড়িবাধ ধরে ডানদিকটায়। আরেকটা কথা, এখানে কিন্তু বীচ দুই ঋতুতে দুই রকম। শীতকালের বীচ অনেকটাই বালুময় থাকে, আর পানি তেমন থাকে না। বিশাল বালুকাবেলায় ছোট ছোট ঢিপির মত কিছু জায়গা থাকে, যেখানে অনায়াসে বসে পার করে দেওয়া যাবে বেশ কিছুটা সময়। বেড়িবাধে পার হলেই এ বালুর সৈকত শুরু হয়ে যায় তখন। কিন্তু বর্ষায় গেলে পুরোই ভিন্ন রূপ দেখা যাবে এখানে। কিসের বালির ঢিপি আর বালুকাবেলা, সামনেই তো পানি শুরু, নামব কোথায়!! চিন্তা নেই, বাধ ধরে ডানে হাটতে শুরু করুন।  এবার কিছুটা শুকনো জায়গা বেছে নিয়ে সেটা ধরে বীচে নেমে পড়ুন। পথ কিছুটা কাদাময় আর পিচ্ছিল মনে হবে, কিন্তু হাটা বন্ধ করবেন না। ঠিক পাঁচ মিনিট হাটলেই পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত সেই বীচ।



শীতকালের বাঁশবাড়িয়ার সৈকতের রয়েছে এক অপার বিশালতা। সৈকতের বিশাল বালুকাবেলায় মন যাবে ছুটে যেতে।  বিশাল সৈকত, আর পিনপতন নীরবতা। বিকেলের বিশাল বালুকাবেলা, শীতের ঠান্ডা বাতাস, আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র, সত্যিই মন জুড়াবার মত। সাথে যদি থাকে প্রিয় কোন মানুষ , বা প্রিয় বন্ধুদের দল, তবে তো কথাই নেই। ছোট ঢিপিগুলোর উপর বসে নিজেই যেন শুনতে পাবেন নিজের নিঃশ্বাস। বিশাল বালুকাবেলা, তার মধ্যে কোন কোন একটা ছোট ঢিপির উপর আপনি বসে আছেন,পাশে হয়ত প্রিয় সেই মানুষ,  আর সামনে সমুদ্রের ঢেউ গুলো আছড়ে পড়ছে, তাতে অস্ত যাচ্ছে লাল সূর্য, এ যেন অন্য এক অপার্থিব দৃশ্য, মন যেন হারিয়ে যাবে অন্য এক দিগন্তে।


বর্ষায় সৈকত কিছুটা পানিতে ডুবে থাকে, তবে বালুকাবেলাটা তখন থাকে না। তার পরিবর্তে বিশাল ঘাসময় এক বীচ হয়ে যায় এটি, যা পানিতে ডুবে থাকে, তবে পায়ের পাতাপানি, বা বেশি হলে হাটুর কাছের পানি, যা পেরুতে আপনি পাবেন এডভেঞ্চারের মতই আনন্দ। আর হ্যা, হাতে একটি  লম্বা লাঠি রাখলে ভাল, যাতে হাটার সময় সামনে পানির গভীরতা নিয়ে আন্দাজ করে এগুনো যায়। কিছু হাটলেই চলে যাওয়া যাবে সমুদ্রের পানির ধারে, আরো দেখা যাবে একদম সবুজ রঙ্গে রাঙ্গানো চোখ জুড়ানো পাড়, যা আপনার হাটার কষ্টকে নিমিষেই উড়িয়ে দিবে। এখানে দাড়িয়েই উপলব্ধি করতে পারবেন সমুদ্রের বিশালতা, তার অসীমতা।  


তাই এখুনি বেরিয়ে পড়ুন, দলবল নিয়ে ঘুরে আসুন অপার সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র বাঁশবাড়িয়া সৈকতে। আকাশ, পাহাড় , বালুকাবেলার নীরবতার এ মহামিলনে নিজেকে নিয়ে যান অন্য এক ভূবনে। সত্যিই, মন ভাল করার মত এতটা সুন্দর জায়গা খুব কমই আছে।

যেভাবে যাবেনঃ

চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড় থেকে সীতাকুন্ডের যেকোন বাস বা টেম্পুতে করে প্রায় ২২ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে যেতে হবে। এটি কুমিরা শিপ ইয়ার্ড পার হয়ে বাড়বকুন্ডের আগে। "বাঁশবাড়িয়া বাজার" বললেনামিয়ে দিবে। সেখান থেকে লোকাল CNG অটো রিকশা করে ভেতরে আরো ২.৫ কিলোমিটার গেলেই পাওয়া যাবে বেড়িবাঁধ।

Google Map Location: 

সবশেষে বলব-

At the end of the day, your feet should be dirty, your hair should be messy and your eyes should be sparkling!


Happy Travelling!






Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!