নিবিড়ের গল্প (পর্ব ৪)
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে
আছে নিবিড়ের ছোটমামা । মুখে তার চিরচেনা সেই হাসি ।
"কিরে বাবু , কই ছিলি এতক্ষন ? "
"কিরে বাবু , কই ছিলি এতক্ষন ? "
নিবিড় জড়িয়ে ধরল তাকে ।
নিবিড়ের মা ,
পরিবারের বড় মেয়ে । তার ছোট দুইটা ভাই আছে ।
তার দুই
মামা আর নানী সিলেটে থাকে । ছোটমামার নাম রাসেল ।
নিবিড় ফ্রেশ হয়ে আসল। অনেক দিন পর ছোটমামা এসেছে বাসায় । আজ তাকে
আর ছাড়ছেনা
সে ।
ছোটমামাকে নিয়ে তার রুমে গেল সে ।
- কি অবস্থা তোর?
- এইতো ভালই । তোমার ?
-আছি তোদের দোয়ায় ।
-এবার কতদিনের জন্যে এলে?
-অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এলাম , তিন কি চারদিন
থাকব।
-তিন-চারদিন তো দেখতে দেখতেই চলে যাবে ।
-কি আর করা ,
- নানী কেমন আছেন? বড় মামা?
-আছে ভালই ।
অনেক দিন পর ভাই এসেছে তাই বিরানি রান্না করেছে নিবিড়ের মা ।
বেশ কিছুদিন ধরেই একটা সমস্যা হচ্ছে নিবিড়ের। প্রথমে কানের ব্যাথা শুরু হয় । এরপর ধীরে ধীরে
চোয়ালের ব্যাথা। এসময় কিছু খেতে কষ্ট হয় তার। নিবিড় মোবাইলে গুগল করে দেখেছে এটার নাম
TMD(Temporomandibular disorder ) . দু:খের কথা হল আজ তার মা বিরানি রান্না করেছে, কিন্তু
সে খেতে পারছেনা। দীর্ঘ দশ মিনিট ভয় আর লোভের মাঝে যুদ্ধ চলল নিবিড়ের মনে।
ভার্সিটি থেকে তপু বাসায় এসে দেখল কেউ নাই ।মীম বাবা মার সাথে নানাবাড়ি গিয়েছে । আর
তপুর বাবা অফিসে ।
তপুর বাবা অফিসে ।
নিজে নিজে চা বানিয়ে খেল সে ।
আজ তার দুইটা টিউশনি ছিল
কিন্তু যেতে ইচ্ছা করছেনা তার । শরীর খুব দুর্বল লাগছে তার ।
তপুর রুমের পাশেই বিশাল বারান্দা । বারান্দায় কিছু ফুলের টব আর কোয়েলের খাচা রাখায় জায়গা
কমে গিয়েছে । তবে বারান্দার একটা দোলনা আছে । যেটাতে বসে মোবাঈল টিপে ভালই সময়
কাটে তার ।
কমে গিয়েছে । তবে বারান্দার একটা দোলনা আছে । যেটাতে বসে মোবাঈল টিপে ভালই সময়
কাটে তার ।
বারান্দায় এসে দোলনায় বসল সে । বারান্দা থেকে আসছে কোয়েল এর বিষ্ঠার গন্ধ । মীমের মা
কোয়েল পোষে । বিরক্তিকর গন্ধের কারনে বেশিক্ষন দোলনায় বসে থাকতে পারলনা সে । বাসায়
দুটো বারান্দা থাকা সত্তেও তার বারান্দায় ই কোয়েলের খাচা রাখা কে অবিচার মনে করে সে ।
কোয়েল পোষে । বিরক্তিকর গন্ধের কারনে বেশিক্ষন দোলনায় বসে থাকতে পারলনা সে । বাসায়
দুটো বারান্দা থাকা সত্তেও তার বারান্দায় ই কোয়েলের খাচা রাখা কে অবিচার মনে করে সে ।
সাধারনত বাসায় সিগেরেট খায় না তপু । কিন্তু আজ
ভিন্ন কথা । একে তো বাসা খালি, দুই হল কোয়েলের কারনে বারান্দা থেকে ভালই গন্ধ আসছে ।
বারান্দায় সিগেরেট খেলেও
তার গন্ধ ছড়াবেনা । কিন্তু সাবধানের মার নেই । সিগেরেট এর ছাই
বারান্দার বাইরে ফেলতে হবে ।বেন্সন ধরাল সে । সিগেরেটের ধুঁয়া দিয়ে রিং বানানোর
কিছু ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগল ।
। কিছুক্ষন সে চুপ করে বসে রইল । হঠাৎ তার চোখে পড়ল হাতে ধরে রাখা সিগেরেট থেকে
নিজে নিজেই রিং তৈরী হচ্ছে । অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সে ।
খাওয়ার পর মামাকে নিয়ে
আড্ডায় বসল নিবিড় ।
-তুমি এখনোও লেখালেখি কর ?
- কি লেখালেখি?তুই জানলি
কার থেকে?
- আর কেই বা হবে ?মা বলল ।
- কি কি বলে আপু?
-তুমি নাকি কলেজে থাকতে
কবিতা লিখতা ।
-ওহ , ওই বয়সে একটু
সবাই লিখে ।
- এখন লিখনা?
- আর সময় কই ।
- মা বলত তুমি নাকি হুট
করেই যেকোনো কিছু নিয়ে কবিতা লিখে ফেলতা ।
- এত কাহিনী না করে আসল
কথাটা বলে ফেল ।
- আমার এক ফ্রেন্ড এর
জন্মদিন , তাই ওকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে দাও ।
- ছেলে নাকি মেয়ে?
- ওর নাম মীম ।
নিবিড়ের মামা মুচকি হেসে
বলল , “এই অবস্থা তাহলে?”
-আরে মামা তুমি যা ভাবছ তা না ।
-কি ভাবছি আমি?
- আরে আমি হালিমা আন্টির মেয়ে
মীম এর কথা বলছি ।
- আপুর বান্ধবী হালিমা ?
- হমম ।
অনেক দিন হল লেখালেখি করেনা
রাসেল , কিন্তু ভাগ্নের আবদার তো ফেলে দেওয়া যায় না ।
শেষ পর্যন্ত জগাখিচুরি করে
একটা লিখেই দিল সে । ছোটমামা থেকে কবিতাটা হাতে নিল সে । দুই
পৃষ্ঠা জুড়ে ছন্দে ভরা ।
-ভালই তো লিখলে ।
- এগুলো আর কি কলেজে থাকতে এর চেয়েও ভাল্ভাবে লিখতে পারতাম ।
- মামা তুমি নাকি উপন্যাস , ছোট গল্প লিখতে ।
- হমম ।
- তো ছেড়ে দিলে কেন ?
- সেটা বুঝতে হলে তোকে আরোও বড় হতে হবেরে । বাস্তবতা খুব কঠিন ।
নিবিড় ইদানিং এই টাইপের কথা খুব বেশী শুনছে । তার যে কাজটা করতে ভাল লাগে যেমন বই
পড়া , খেলাধুলা এসবের কারনে মা তাকে খুব বকাঝকা করে । আর সব কথার শেষেই থাকে সেই
কমন ডায়ালগ ," ভাল করে না পড়লে ঢাকা শহরে টিকে থাকতে পারবিনা , বাস্তবতা এত সহজ না । "
নিবিড়ের মাঝে মাঝে তার মাকে বলতে ইচ্ছা করতে যে তার টিকে থাকার ইচ্ছা নেই এই শহরে ।
ইটপাথরের এই শহরের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি চায় সে ।
ইটপাথরের এই শহরের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি চায় সে ।
নিবিড় ছোটমামাকে নিয়ে পরের দিন ঘুরতে বের হল । হাতিরঝিল
গিয়ে ঘুরে আসবে তারা ।
-ঢাকা শহরে খোলামেলা জায়গা খুব কম রে
-ঠিক বলেছ । খুবই ফালতু জায়গা ।
- তোর বাবার কাছে যাস না কেন । ঘুরে আয় ওদিকে ।
-তুমি তো গিয়েছিলে , কেমন রাজশাহী শহর ?
- এক কথায় নির্ঝঞ্ঝাট ।
- তাহলে তো যেতে হয় ।
রাস্তায় টানা দুই ঘন্টা জ্যমে আটকে থাকতে হল । অবশেষে হাতিঝিল গিয়ে পৌছল তারা ।
ঢাকা শহরের মানুষদের আছে হাতিরঝিল বিনোদনকেন্দ্রে পরিনত হয়েছে । আর হবেই বা না
কেন? এত খোলামেলা জায়গা আর ফুরফুরে বাতাস কোথাও নেই ।
ঢাকা শহরের মানুষদের আছে হাতিরঝিল বিনোদনকেন্দ্রে পরিনত হয়েছে । আর হবেই বা না
কেন? এত খোলামেলা জায়গা আর ফুরফুরে বাতাস কোথাও নেই ।
প্রায় একঘন্টা থাকার পর তারা নীলক্ষেত গেল । গোয়েন্দা কাহিনী পড়তে ভালই লাগে
নিবিড়ের ।
শার্লক হোমসের উপন্যাস
শার্লক হোমসের উপন্যাস
সবগুলোই শেষ করেছে সে । মামাকে বলাতে মামা তাকে ফেলুদা সমগ্র কিনে দিল ।আরেকটা বই
কিনল সে । এটা সে মীমকে দিবে জন্মদিনের উপহার হিসেবে ।
বাসায় এসে হাতমুখ না ধুয়েই
বই নিয়ে বসে পড়ল নিবিড় ।
ভাত খাওয়ার পর সে মামার
লেখা কবিতাটা নিজের হাতে আলাদা কাগজে লিখল । তারপর সেটি
মীমের জন্য কেনা বই এর
ভেতর রেখে দিল । পরদিন মীমের জন্মদিন , কবিতাটা সারপ্রাইজ হিসেবে
থাকবে তার জন্য ।
carry on
ReplyDelete:)
Delete