মৃত চিরকুট

                         

"শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ ।
বধু শুয়েছিল পাশে, শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল, আশা ছিল - জোছনায় - তবু সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙ্গে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশ কাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার ।
এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি !
রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইদুরের মত ঘাড় গুজি
আঁধার ঘুজির বুকে ঘুমায় এবার ;
কোনদিন জাগিবে না আর ."

কবি জীবনানন্দ দাশের এই অবিনাশী কবিতাটি পড়ে যুগে যুগে শিহরিত হয়েছে সবাই। লাশকাটা ঘরে মৃত এক মানুষের গল্প বলেন কবি, গত রাতেই যে বেছে নিয়েছিল আত্মহত্যার পথ।
আচ্ছা আত্মহত্যার পূর্ব অনুভূতি কেমন হতে পারে? একটি বদ্ধ ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলানো একটি দড়ি, অথবা বহুতল ভবনের ছাদ, কিংবা হাতে গুজে রাখা কয়েকটা ঘুমের বড়ি............ ঠিকে তার আগ মুহূর্তে কি চলে সেই মানুষটার মনে? নানা ধরণের চাপ, অশান্তি, ঘৃণা,রাগ,ভয়,হতাশা .........যুগ যুগ ধরে আত্মহত্যা করা মানুষদের জন্য কখনো উপসর্গের অভাব হয় নি। যদিও আত্মহত্যা কখনই কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। নিজের জীবনের কাছে হেরে যাওয়া মানেই আত্মহত্যা। তবুও সৃষ্টির শুরু থেকে আত্মহত্যা যেন এর চিরায়ত রহস্যেই থেকে গেল। কেউ কেউ আবার আত্মহত্যার আগে লিখে যান চিরকুট। অদ্ভুত সেসব চিরকুটের ভাষা। কয়েক লাইনের এসব চিরকুটে কখনো পাওয়া যায় অনুতাপ, কখনো তীব্র ঘৃণা আবার কখনো ঠাট্টা উপহাসের মিশেল! চলুন দেখে নেয়া যাক এমনই কিছু সুইসাইড নোটঃ



#
 আমি প্রায় নিশ্চিত যে আমি আবারো পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হয় না ওই ভয়ানক সময়গুলোর মধ্যে দিয়ে আমি আরেকবার যেতে পারব। আমার পক্ষে আর ফিরে যাওয়াও অসম্ভব। আমি এখন প্রায়ই অদ্ভুত আওয়াজ শুনি।
                                                      - ভার্জিনিয়া উলফ (১৮৮২-১৯৪১,বিখ্যাত উপন্যাসিক)


#
ভবিষ্যতটা মনে হয় আগের মতই হবে...... অসুস্থ আর বেদনাদায়ক। আমি শান্তি খুজে পেয়েছি এবং এটা এখানেই!
      -জেমস ওয়েল (১৮৮৯-১৯৫৭,সেরা পরিচালকদের একজন যিনি কখনো অস্কারের জন্য মনোনীত হননি)


#
 হ্যারাল্ডের জন্য...... আমি প্রার্থনা করি ঈশ্বর তোমাকে ও আমাকে ক্ষমা করুক কিন্তু আমি আপাতত নিজের জীবন নিজে নিয়ে নেওয়াকেই উপযুক্ত মনে করছি। আমার বাচ্চাটাও আমার সাথেই যাক, এতে ও লজ্জার সাথে জন্ম নেয়ার হাত থেকে মুক্তি পাবে।
                                               -লুপ ভেলেজ (১৯০৮-১৯৪৪, বিখ্যাত ল্যাটিন অভিনেত্রী)


#
 কোন খেলা নেই, কোন ভ্রমণ নেই, কোন মজা নেই, কোন সাঁতার নেই। ৬৭! ৫০ পেরিয়েছি আরো ১৭ বছর আগে! আমার প্রয়োজনের চেয়ে ১৭ বেশী হয়ে গেল! আমি সবসময়ই বিদ্বেষপরায়ণ। ৬৭ তে কোন মজাই নেই, লোভী হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। শান্ত হও- এটা বেশি কষ্ট দেবে না!
                                     -হান্টার এস. থম্পসন (১৯৩৭-২০০৫, সাংবাদিক ও উপন্যাসিক)


#
ফ্রান্সিস এবং কোর্টনি...... আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তুমি তোমার মত থাক কোর্টনি! আর ফ্রান্সিস, তোমার জীবনে আমি না থাকলেও অপার সুখের হবে। আমি তোমাদের ভালবাসি.........ভালবাসি
                                               -কার্ট কোবেইন (১৯৬৭-১৯৯৪, গিটারিস্ট,গীতিকার,গায়ক)


#
প্রিয় পৃথিবী...... আমি বিদায় নিচ্ছি কারণ আমি বিরক্ত! আর মনে হয় আমি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বেঁচেছি। তোমার চিন্তাভাবনা তোমার কাছে রেখে আমি বিদায় নিচ্ছি- শুভ কামনা
                                                 -জর্জ স্যান্ডার্স (১৯০৬-১৯৭২,গায়ক,গীতিকার,লেখক)


#
আমি নিশ্চিতভাবে এটা শেষ করতে যাচ্ছি। এখন আর কোন আশা অবশিষ্ঠ নেই। আমি শান্তিতেই থাকব। এই ব্যাপারে কারোরই কিছু করার নেই। পুরোটাই আমার সিদ্ধান্ত!
                          -ফ্রেডি প্রিঞ্জ (১৯৫৪-১৯৭৭, অভিনয়শিল্পী ও স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান)


#
তারা আমাকে ধরার চেষ্টা করেছিল......আমিই আগে তাদের ধরে ফেললাম!
                                                                               -ভ্যাচেল লিন্ডসে (১৮৭৯-১৯৩১, কবি)


#
 দুর্দশা শেষদিন পর্যন্ত টিকে থাকবে!                                    
                                                           -ভিনসেন্ট ভ্যান গগ (১৮৫৩-১৮৯০, চিত্রকর, শিল্পী)


#
দেখা যাক......যদি এভাবে কাজটা হয়!                                
                                                            -জন এরিক হেক্সাম (১৯৫৭-১৯৮৪, অভিনয়শিল্পী)
 

#
যখন সব প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। যখন কারো নিশ্চিত অনিবার্য মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না, তখন সেটা ত্বরান্বিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
                                 -পারকিন্স গিলম্যান (১৮৬০-১৯৩৫,উপন্যাসিক,অধ্যাপক,লেখক)


#
 উৎসব শেষ হয়ে গেছে, আলো ফুরিয়ে গেছে।             
                                                      -রবার্ট ই. হাওয়ারড (১৯০৬-১৯৩৬,উপন্যাসিক,লেখক)


#
আমি স্বয়ং, সস্ত্রীক মরদেহের ওপর শত্রুপক্ষের বর্বর উল্লাস এড়াতে মৃত্যুকেই বেছে নিলাম। আমরা চাই, এখানেই আমাদের পুড়িয়ে দেওয়া হোক। কারণ, আমার জাতির জন্য দীর্ঘ ১২ বছরের সেবাকর্মের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানেই ঘটেছে।
                                                                                    -অ্যাড্লফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫)


#
 সবকিছু সমাপ্ত। যাওয়ার সময় হয়েছে। আর কিছু হওয়ার নেই......
       -রবিন উইলিয়ামস (১৯৭৬-২০১৪, বিখ্যাত অভিনয়শিল্পী ও স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান)
 

#
এই মুহূর্তে মরে যাওয়া ছাড়া আর কোন ইচ্ছা নেই। কোনকিছুর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছি না।


                                                           -ইয়ান কুরটিস (১৯৫৬-১৯৮০,বিখ্যাত সংগীতশিল্পী)

Comments

  1. উৎসব শেষ হয়ে গেছে, আলো ফুরিয়ে গেছে।

    ReplyDelete
  2. তারা আমাকে ধরার চেষ্টা করেছিল......আমিই আগে তাদের ধরে ফেললাম!

    ReplyDelete
  3. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  4. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  5. দেখা যাক......যদি এভাবে কাজটা হয়!
    -জন এরিক হেক্সাম

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!