ধূসর ঘাস - অস্পষ্ট উৎসব







১৪ ই এপ্রিল।


সকাল ১০ টা। অন্তু ঘুম থেকে উঠে ওয়াশ রুম এর দিকে আগালো।ঘুমটা আসলে ভেঙ্গে গেল বলা চলে কেননা অন্তু যখন বিছানায় যায় তখন সকাল ৭ টা বাজে। রাত ধরে অন্তু সিদ্ধান্ত নেয় ১লা বৈশাখে সে কোথাও যাবে না, অমরের ৩২১ নং রুম ছাড়া।

আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। অন্তুর সাথে থাকার দরুন আমিও জগত সংসারের উৎসবের প্রতি দিন দিন আবেগহীন হচ্ছিলাম। আমারো মনে হতে লাগলো এগুলা মুল্যহীন। উৎসবের জন্য কখনো দিনক্ষণ ঠিক করা লাগে না। জীবন মানে উৎসব। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই উৎসব। চোখ খুলে অন্তুর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। পরনে জিন্স এর প্যান্ট, পাঞ্জাবি, হাতঘড়ি আর চোখে তার মা এর কিনে দেয়া সানগ্লাস। এই সান গ্লাস সে কাউকে পরতে দেয় না।

- অই উঠ , উঠ বাইরে যাইতে হবে
- কই??
- আরে কথা কম বল। রেডি হ। বাইরে যাবো।

আমি কথা না বাড়িয়ে গোসল করে শার্ট পড়ার সময় অন্তু বলল -

- অই পাঞ্জাবী নাই তোর?পাঞ্জাবী পর। - পাঞ্জাবী কেন?

হাতের জলন্ত আধখানা বেনসনটা আমার দিকে বাড়িয়ে বলল -
- আজকে মাইয়া দেখব,মাইয়া।
এই কথাটার পর আমি অন্তুর মুখে যে হাসিটা দেখলাম এরপর কিছু বুঝতে আর বাকি রইল না।আমরা দুইজন একটা রিকশায় উঠলাম। মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্তুকে একটা মেয়ে দেখালাম -

- কেমন? - দেখ থার্ড ইয়ার এ উঠসস, behave yourself

বাজারে পৌছানো পর্যন্ত আমি আর কথা বললাম না। রিকশা থেকে নেমে আমরা মিলন ভাইয়ের দোকানে বসলাম। আমার হাতে একটা বেনসন আর পেপসি দিল অন্তু। আমি আবার অবাক হলাম।অন্তু কখনো কাউকে এভাবে অ্যাপায়ন করে না। পেপসি খাওয়ার সময় অন্তু আমার মাথা ঘুরিয়ে এবার বলল -

- এই মাইয়াটা কেমন?

আমি মেয়েটিকে খেয়াল না করে অন্তুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কিছুই বললাম না। যদিও মেয়েটা দেখতে দারুন ছিল আর মেয়েটা আমাদের ক্লাসের।

- পান খাবি? - হু? - আরে পান খাবি নাকি?পান? - খাওয়া যায়। - এই মিলন ভাই, দুইটা পান দাও তো হাকিম্পুরি জরদা দিয়া।

পানটা মুখে নেওয়া মাত্রই অন্তুর অর্ডার - চুন নে বেটা,
তরকারীর মজা নুনে, পানের মজা চুনে।

পানের বটু দিয়ে একটু চুন মুখে দেওয়ার পর বুঝলাম অন্তু কথাটা মিথ্যা বলে নাই।
তরকারীর মজা নুনে, পানের মজা চুনে।

কথাটা মনে হল আজীবনের জন্য মাথায় গেঁথে থাকবে আমার।

বিল পরিশোধ করেই ক্যাম্পাস এর দিকে আবার রওয়ানা হলাম আমরা।রিকশায় আসার সময় অন্তুকে জিজ্ঞেস করলাম -

- হঠাত পান খাওয়ার চিন্তা মাথায় আসল কেন তোর? - পহেলা বৈশাখ তো তাই। - পহেলা বৈশাখ এ হাকিমপুরী জরদা মাইরা পান খাইতে হবে এই কথা কই লেখা আছে? - আমার নোটবুকে।

আমি আর কথা বাড়ালাম না,জানি বাড়িয়ে লাভ নাই। হলে আসার পর আমি রুমে এসে এক লম্বা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে জেগে দেখি রাত বাজে ৯ টা। মেজাজ হল খারাপ। ডাইনিং টা মিস হয়ে গেল।আজকে রাতে বাইরে খেতে হবে। আর কোন উপায় নাই। মানিব্যাগ টা খুলতে গিয়ে দেখি একটা কাগজ, লেখা -
"১০০ টাকা নিছি বেটা, অন্তু "।

অন্তুর রুমে গিয়ে দেখি অন্তু নাই। অন্তুর বেড এ গিয়ে বসলাম। এই বেডটা একটা সময় আমার ছিল। অনেক হাবিজাবি চিন্তা করতাম এই বেড এ শুয়ে। অন্তুর বেড এর কোনায় হাত ঢুকালাম।সিগারেট নাই। আমি জানি অন্তু সিগারেট কোথায় লুকায়ে রাখে। তখন দেখি পা বরাবর দেয়ালে বিশ্রী হাতের লেখায় ছোট করে লেখাঃ

আজকে পান খাইতে হবে। ১৪.০৪.১৬

লেখাটা কার আমার চিনতে অসুবিধা হয় নাই। আর সাথে সাথে বুঝলাম অন্তুর নোটবুক জিনিসটা আসলে কি?
অন্তুর নোটবুক হল অন্তুর বিছানার সাথে লাগান 'সাদা' দেয়াল। এটা আমার কাছে একটা নিছক দেয়াল হলেও অন্তুর কাছে এটি ছিলো একটা সাদা ক্যানভাস এর মত। অন্ত স্বপ্ন শুধু দেখত না, অন্তু স্বপ্ন আঁকত।

Comments

  1. অন্ত স্বপ্ন শুধু দেখত না, অন্তু স্বপ্ন আঁকত।
    লাস্টের লাইনটা হৃদয় ছুয়ে গেল

    ReplyDelete
  2. অন্তু ভাই সেরা...............

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!