ডানকার্কঃ নোলানের চোখে ইতিহাসের গল্প

ক্রিস্টোফার নোলান । এই একটি শব্দই হলিউড কাঁপানোর জন্য যথেষ্ট। ব্যাটম্যান ট্রিলজি, প্রেস্টিজ, ইনসেপশন, ইন্টারস্টেল্যার  ইত্যাদি খ্যাত এই ডিরেক্টর প্রথম বারের মত পর্দায় এনেছেন যুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা, ডানকার্ক। অনেকটা নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে এসে প্রথমবারের মত মাঠে নেমেছেন নোলান। 

শুরুতেই ডানকার্কের ইতিহাস নিয়ে জেনে নেই কিছু তথ্য। ডানকার্ক সমুদ্র বন্দর অবস্থিত নর্দান ফ্রান্সে। ডানকার্ক এর বিভীষিকাময় যুদ্ধ নিয়েই নোলানের ডানকার্ক সিনেমা।
১৯৪০ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ব্রিটিশ এর প্রায়  ৪ লক্ষ সৈন্য আটকে পড়ে ডানকার্ক সি পোর্টে। জার্মান সৈন্যরা তাদের ঘিরে ফেলেছিল চারপাশ থেকেই। 


                                                                ডানকার্ক ইভাকুয়েশন টাইমলাইন


আটকা পড়া সৈন্যের সংখ্যার তুলনায় উদ্ধারের জন্য আসা জাহাজের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাছাড়া, ক্রমাগত আক্রমন চলছিল। উদ্ধারকারী জাহাজগুলো ও বিমানের আক্রমনে মাঝ সাগরে ডুবে যাচ্ছিল হাজারো সৈন্য নিয়ে। যুদ্ধ চলেছিল আকাশপথে ও। ডানকার্কে আটকা পরা সৈন্যদের কাছে আশা টাই ছিল একমাত্র যুদ্ধাস্ত্র।



 ১৯৪০ সালের ২৬ মে শুরু হয় ডানকার্ক ইভাকুয়েশন যদিও ৪ লক্ষ সৈন্যের মধ্যে কেবল ৪৫-৫০ হাজারকেই রক্ষা করে ঘরে ফেরাতে পারবেন বলে মনে করেছিল বৃটিশ কর্তৃপক্ষ। যুদ্ধে বিধ্বস্ত হতে থাকা জাহাজের অবস্থা দেখে, পরবর্তীতে সাহায্য চাওয়া হয় জনগনের কাছে। হাজারো মাছ ধরার ট্রলার, ইয়ট, লাইফবোট,ফেরী নিয়ে ডানকার্কে পৌছান ব্রিটিশ সিটিজেনরা। সর্বশেষ, ৪ জুন ১৯৪০ যেদিন ডানকার্ক ইভাকুয়েশনের সমাপ্তি ঘোষনা করা, হিসাব মতে প্রায় ১ লক্ষ ৯৮ হাজার বৃটিশ ও প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার ফ্রেঞ্চ ও বেলজিয়ান সৈন্য কে ঘরে ফেরানো সম্ভব হয়েছিল। মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে আসা টা কে অনেকে মিরাকেল বলেও দাবী করেছিলেন।

এবার আসি মূল সিনেমার গল্পে।


১ ঘন্টা ৫০ মিনিটের সিনেমায় নোলান তার সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়েছেন ঠিক প্রতিবারের মতই। প্রতিটি মূহুর্তে রেখেছেন টান টান উত্তেজনা। 
 ডানকার্ক সিনেমাকে এক কথায় বলা যায় যুদ্ধের সবচেয়ে বর্ণনামূলক সিনেমা। অসাধারণ  ছিল সিনেমাটোগ্রাফি। নোলানের সিনেমা দেখে যারা অভ্যস্থ তাদের এটা জানা যে নোলান সাহেব সোজাসাপ্টা গল্পের মানুষ নন। যদিও হিস্টোরিক্যাল প্লট কিন্তু এখানেও তিনি এনেছেন নন লিনিয়ার গল্পের ছোঁয়া। সময়ের খেলা রয়েছে তার এই সিনেমাতেও। তার সিনেমায় দেখা যায়, একই সময়ে বিভিন্ন লোকেশনে ঘটা ঘটনা। আকাশপথের যুদ্ধ,  একই সময়ে অন্য দিকে বন্দরে গুলিবর্ষন আবার অন্য দিকে সিটিজেন বোটে এক পিতা পুত্রের কথোপকথন। দুই থেকে তিনটি ঘটনার বর্ণনা যা একই সময়ে ঘটে ভিন্ন লোকেশনে। সিনেমার ভাষায় যাকে বলা হয় লেয়ার ন্যারেটিভ স্টোরি টেলিং। ছবির দুর্দান্ত দৃশ্য গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিমানযুদ্ধ যেখানে ফাইটার ছিলেন Tom Hardy.  তাছাড়া, Cillian Murphy, Kenneth Branagh, MarkRylance এর ছিল নজরকাড়া পারফর্মেন্স। আর সব শেষে Hans Zimmer এর উত্তেজনামূলক আবহসংগীত দিয়েছিল পরিপূর্ণতা। 

ডানকার্ক এর ছোঁয়া এখনো সিনেমাজগতে পরে নি। যদিও প্রিমিয়ার দেখে বিখ্যাত সমালোচক ব্র্যান্ডন নরউড  বলেছেন, এটা তাঁর দেখা নোলানের সবচেয়ে পছন্দের ছবি নয়৷ কিন্তু গোটা ছবিটা দেখার সময়ই তাঁর হাতের তালু উত্তেজনায় ভিজে গিয়েছিল৷  অনেক সমালোচকদের মতে ডানকার্কের আছে অস্কার জিতে নেওয়ার সম্ভাবনা। ১৫০ মিলিয়ন বাজেটের এই সিনেমা অস্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌছাবে কিনা তা জানতে  অনেক সময় বাকি। তবে এখন সংক্ষেপে জেনে নেই আজ পর্যন্ত ডানকার্কের অবস্থান।

The Internet Movie Database (IMDB) এ ডানকার্ক কে এখন পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন প্রায় ২১ হাজার দর্শক । এবং এটির রেটিং ৯/১০।  রোটেন টোমাটোস এ ৯২% ও মেটাক্রিটিকে এই সিনেমা পেয়েছে ৯৪ % ।


যুদ্ধ ভিত্তিক ছবি হলিউডে নতুন নয়। কিন্তু তবুও ডানকার্ক ভিন্নধর্মী। কেননা যুদ্ধের ভয়াবহতাকে তুলে ধরে যুদ্ধ কাম্য নয় এমন বার্তা বহন করে নি ডানকার্ক। ডানকার্ক বলেছে হার না মেনে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার কথা। কাপুরুষ হয়ে বেঁচে থাকা নয়, যুদ্ধ করে দেশের হয়ে বেঁচে থাকা। যুদ্ধের বাস্তবতা কে স্বীকার করে নিয়ে জীবনকে এগিয়ে নেওয়াই মূল সুর ছিল সিনেমা জুড়ে।  

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!