পরম্পরা (পর্ব ৩)
এরপর..................
এখন অভির এক নতুন জীবন শুরু হয়েছে! পড়ালেখার ফাঁকে তার জীবনে আরও এক জন এসেছে। ওর নাম মৌমিতা! মৌমিতা অভির সাথে একই মেডিকেল কলেজে পড়ে। দুজনের ক্লাস একই হলেও পরিচয়টা কিন্তু অনেক দেরীতে। তাদের জীবনটা ছিল যান্ত্রিক অথচ অপার সুখের।
মৌমিতা অভির জীবনে আসে হঠাত করেই। সেদিন অভি গাছতলায় বসে বই পড়ছিল। সকাল থেকে দুটো ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও শেষটা আর হয় নি। হঠাত মৌমিতা এসে অভির পাশে দাঁড়ায়। অভির দিকে একটা খাতা বাড়িয়ে বলে, “এটা কি তোমার নাকি?”। মৌমিতার হাত থেকে খাতাটা নেয় অভি। খাতার উপর নাম লেখা......... “অভি রায়”......ক্লাস শেষ হওয়ার পর খাতাটা ব্যাগে ঢুকাতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল অভি। “ধন্যবাদ, আপনাকে”। হঠাত অভি একটা অস্বস্তিতে পড়ল এই মেয়েটাকে সে আগেও ক্লাসে দেখছে কিন্তু নাম জানা হয়নি কখনো। আর অভি এমনিতেই অনেক চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। অভির অবস্থা কিছুটা আঁচ করতে পারে মৌমিতা...... “আমি মৌমিতা, তোমাকে কিন্তু আমি চিনি!” অভি জোর করে কিছুটা হাসার চেষ্টা করে। “আচ্ছা আসি” এই বলে মৌমিতা বিদায় নেয়।
এরপর প্রায়ই মৌমিতার সাথে দেখা হতে থাকে অভির। কখন ক্লাসে, কখনও বা লাইব্রেরীতে আবার কোন কোনদিন ক্যান্টিনে...... প্রথম দিকে কথা খুব কম হলেও একসময় গাঢ় হতে থাকে তাদের বন্ধুত্ব। অভিও যেন আস্তে আস্তে মৌমিতার সাথে জড়িয়ে যেতে থাকে। দুজনের বন্ধুত্ব একসময় রূপান্তরিত হয় প্রেমে। যদিও তাদের মাঝে এরপরো বন্ধুত্বটাই বেশি কাজ করতো। এভাবে তাদের ভালোই কাটছিল সময় গুলো। দেখতে দেখতে মেডিকেল জীবনের ৪ বছর কাটিয়ে দেয় দুজনে।
আজকে মেডিকেলের শেষ বর্ষের ফলাফল দেওয়া হবে। মৌমিতাকে অভি কথা দিয়েছে ডাক্তারী পাশ করে তাকে বিয়ে করবে। তাই দিনটি ছিল তাদের দুইজনের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অভি ভালোই ফলাফল করেছে। হঠাত, তার হাতে একটি চিঠি এল। চিঠিটা তার গ্রাম থেকে এসেছে। মায়ের চিঠি, বাবা নাকি কিছুটা অসুস্থ। অভি আর দেরী করে না মৌমিতাকে সব বুঝিয়ে তখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
অভি বাড়ি যাওয়ার দিন কয়েক পরেই বাবা সুস্থ হয়ে যায়। অভি খুব তাড়াতাড়ি শহরে ফিরে যেতে চাইল। কিন্তু মায়ের অনুরোধে আরো কয়েকটা দিন থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। একদুপুরের কথা......... অভি বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। হঠাত বাসায় কেউ এল, মায়ের সাথে কথা বলল তারপর একটা নিমন্ত্রণ পত্র দিয়ে গেল। অভি খুলল সেটা........মিতার বিয়ের নিমন্ত্রণ! অভির হঠাত পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়। এই মিতার কথা অভি একসময় পাগলের মত ভাবত। কিন্তু কখনো কথা বলার সাহস পেত না। নিজের অজান্তে হেসে উঠল অভি। আচ্ছা মিতার প্রতি অভির সেই অনুভুতি কি এখনো আছে তার? এই প্রশ্নের জবাব পায় না সে। তার দুইদিন পর জরুরী কাজে আবার শহরে ফিরে এল অভি।
শহরে আসার পরদিন মৌমিতার সাথে আবার অভির দেখা হয়। আজ মৌমিতা অভিকে কিছু কথা বলবে। তাদের দুজনের সবচাইতে প্রিয় জায়গা সেই গাছতলায় এসে বসল তারা। কিছুক্ষন নীরব থাকার পর মৌমিতাই প্রথম শুরু করল কথাটা, “তুমি যাওয়ার পর বাসার আমার বিয়ে নিয়ে কথা উঠে, আমি তখন তোমার কথা বলে দিয়েছি। আর বাবাও তোমাকে দেখতে চেয়েছেন” অভি মৌমিতাকে কথা দেয় সে পরদিনই মৌমিতাদের বাসায় যাবে।
আজকে অভি যাবে মৌমিতার বাসায়। মৌমিতার বাবা ডেকেছেন। কিছু কথা নাকি বলার আছে। অভি বাসায় ঢুকতেই নিজেকে এক রাজপ্রাসাদের মত ঘরে আবিস্কার করলো। সেদিন অনেক আপ্যায়ন করা হল তাকে। এক পর্যায়ে মৌমিতার বাবা এলেন।
-ভালো আছো?
-জী আঙ্কেল।
-তোমার মা বাবা?
-আঙ্কেল...... এইতো ভালোই।
-তোমার কথা মৌ এর মুখে শুনেছি, আমি আসলে এইবিষয়ে কিছু বলতেই তোমাকে ডেকেছিলাম।
অভি কিছুটা বিব্রত বোধ করলো। অভি ভেবেছিল বিষয়টা নিয়ে সে তার মা-বাবাকে বলবে তারপর তারাই আলোচনা করবে। আর অভি এখানে নিজের বিয়ের কথা নিজেই বলবে! বিষয়টা কেমন জানি লজ্জার মনে হল অভির কাছে।
মৌমিতার বাবা বললেন, “দেখো,তুমি ছেলে ভালো এবং কোয়ালিফাইড,তোমার যোগ্যতা নিয়ে আমি কোন প্রশ্ন তুলতে চাই না। তবুও আমার মেয়ের সুখের কথা তার ভবিষ্যতের কথা আমাকে চিন্তা করতে হবে”
অভি কেবল জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করলো।
-দেখো,তোমরা দুইজনেই তো ডাক্তারী পাশ করলে। আর একবছর প্রেক্টিসের পর তোমাদের দুইজনকে তো পুরোপুরি ডাক্তার বলাই যায়। আর এরপর কি করবে? তা নিয়ে কি কিছু ভেবেছো?
মৌমিতা এতক্ষণ চুপ করে ছিল। সে এই প্রশ্নে বলে উঠলো, “কি করবো মানে? ডাক্তারী পাশ করে মানুষ কি করে? ডাক্তারী করবো।তুমি এটা কেমন কোয়েশ্চন করলে বাবা?”
-আমি জানি মৌ, আমি বলতে চাচ্ছিলাম তোরা দুইজনে যদি একটা ক্লিনিক খুলিস।
এবার অভি বলার সাহস পেল, “জী আঙ্কেল আমারো এমন একটা প্ল্যান আছে।“অভির মনে পড়ে গেল গ্রামবাসীদের দেওয়া কথাটি। অভি তাই মনে মনে একটা কল্পনা করে বসলো, সে আর মৌমিতা গিয়ে গ্রামে একটা হাসপাতাল বানাবে,তারপর শহরের সব আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে যাবে। বাকি জীবনটা ওখানেই কাটাবে। মৌমিতা আর অভির চিন্তায় এতোটাই মিল ছিল যে অভির কল্পনায় কখনো আসে নি যে,মৌমিতা এই বিষয়ে না করতে পারে। তাই অভিও কখনো এই ব্যাপারে মৌমিতাকে কিছুই বলে নি..........................................(চলবে)
ভাল হচ্ছে।
ReplyDeleteএবার একটু সাসপেন্স/ক্লাইমেক্স চাই লেখিকা সাহেবা।
পুরোনো দিনের গল্প তো তাই সাসপেন্স কম 🙈🙈
Delete