"When life leaves us blind, love keeps us kind"- Chester Bennington



ক্লাস ৯ এর দিককার কথা। তখন গানটান তেমন একটা শুনতাম না। চারপাশে যা বাজতে থাকে তাই শুনি অবস্থা। এক বিকালে বসলাম বড় ভাইয়ের ডেস্কটপটার সামনে। মুভি দেখার মত সময় নেই আবার গেম খেলার মুডও নাই। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ঢুকলাম মিউজিক ফোল্ডারে। চোখে পড়ল একটা গানের ভিডিও। নাম দেয়া লিংকিন পার্ক- লাইভ ইন টেক্সাস। ওপেন করলাম। বিশাল এক স্টেজ। স্টেজের উপর ৬ তরুন। আর সামনে এক জনসমুদ্র। ৬ জনের কেউ কানে লাগিয়ে লিচ্ছেন ইন-এয়ার মনিটর, কেউ গিটার টিউন করছেন, কেউ ড্রামস ঠিক করছেন...... দুই জন কিছুক্ষন হালকা লাফিয়েও নিলেন। তারপর সবাই একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে গোল হয়ে নিজেদের ঘিরে ধরলেন এরপর হাত মিলালেন একে অপরের সাথে। তারপর স্টেজে আগমন। মুহূর্তে যেন ফেটে পড়ল স্টেডিয়াম! ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে গান। জলপাই রঙা শার্ট পড়া ভোকাল গাইছেন........."Don,t say! Sometimes I need to remember just to breathe......Sometimes I need you to stay away from me"
  গানের লিরিক্স কিছু বুঝি তো কিছু বুঝি না । কিন্তু শুনতে থাকলাম। এরপর একে একে গেয়ে চলল Somewhere I belong...... Lying from you...... Papercut.....Points of authority .....Runaway Faint...... From the inside..... Figure.09.....With you..... By myself.....Numb.....Crawling....In the end..... A place for my head.......One step closer

স্টেজের মানুষ তখন সবাই যেন পাগলপ্রায়। কেউ নিজের টিশার্ট খুলে মাথার উপর ঘুরাচ্ছে তো কেউ গোল হয়ে ঘুরছে, আবার ৪/৫ জন মিলে ১ জন কে আকাশে ছুড়ে দিচ্ছে। নিজে যেন এসবে বুঁদ হয়ে গেলাম। অদ্ভুত এক গতি গানগুলোর ভেতর...... যেন এক একটা গান এক একটা পাওয়ার সেল হয়ে স্টেডিয়ামের মানুষদের শক্তি সঞ্চার করছে। অমানুষিক এক শক্তি ভর করেছে যেন গায়কের মধ্যে। সারা শরীর বেয়ে পানির মত ঘাম ঝরছে কিন্তু তার ভ্রূক্ষেপ নেই। পাশের জন আবার র‍্যাপ জুড়ে দিচ্ছেন গানের মাঝে মাঝে। এক অদ্ভুত সমন্বয়। শুনছি কিন্তু ক্লান্ত হচ্ছি না। সব কিছু মিলিয়ে মনে হল ঘোরে চলে যাচ্ছি , এই ঘোর অদ্ভুত এক ভালো লাগার ঘোর। এই ঘোর অদ্ভুত এক নেশার ঘোর। ১ ঘন্টা ১১ মিনিট কোন ফাকে শেষ হল টের পেলাম না। এরপর থেকে শুরু। খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম । ব্যান্ডের নাম লিংকিন পার্ক। আমেরিকান হেভি মেটাল রক ব্যান্ড । সদস্য সংখ্যা ৬। চেস্টার বেনিংটন ভোকাল, মাইক শিনোডা - ভোকাল, রিদম গিটার, কি-বোর্ড, পিয়ানো ব্র্যাড ডেলসন - লীড গিটার, ফোনিক্স - বেজ‌ গিটার, ব্যাকিং ভোকাল জো হান - টার্নটেবল, স্যাম্পলস্‌ , প্রোগ্রামিং, কি-বোর্ড, রব বাউর্ডন - ড্রাম, পার্কাশন।
সবাইকে ভাল লেগে গেল। সবচেয়ে ভাল লাগল টিম কম্বিনেশন টা। গান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবাই স্টেজের সামনে থেকে বাজান। কেউ যেন কারো চেয়ে কম যান না। তবে সবচেয়ে অবাক হতাম লিড ভোকালে। চেস্টার বেনিংটন ! সারা গায়ে ট্যাটু আঁকা ছোট করে ছাটা চুল, আর চোখে পাওয়ার চশমা। প্রথম দর্শনে মনে হয় নিতান্ত সাধাসিধে একজন। তাবে গান শুরু হলেই যেন কিছু একটা ভর করে তার শরীরে। কখন আস্তে গাইছেন কখনো বা জোরে, আবার হঠাত তীক্ষ্ণ চিৎকার টাও যেন ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে সব মিলিয়ে চেস্টার যেন এক কমপ্লিট প্যাকেজ।

চেস্টার বেনিংটন (১৯৭৬-২০১৭)
লিংকিন পার্কের সাথে চেস্টারের পথচলাটা ২০০০ সাল থেকে। মাইক শিনোডা, ব্র্যাড ডেলসন, রব বাউর্ডনজো হান নাম, ডেভ ফিনিক্সমার্ক ওয়েকফিল্ড  ছিলেন লিংকিন পার্কের প্রতিষ্ঠাটা সদস্য। তবে প্রথম দিকে ব্যান্ডের নাম ছিল জেরো। কিন্তু কিছুতেই যেন পেরে উঠছিল না ছয় তরুণের জেরো। ব্যর্থতা এবং অচলাবস্থার কারণে তখন ভোকাল ওয়েকফিল্ড ব্যান্ড ছেড়ে দেয়। তারপর তাদের সাথে পরিচয় ঘটে  অ্যারিজোনার ভোকাল চেস্টার বেনিংটনের। ওয়েকফিল্ড এর ফেলে যাওয়া স্থানে জায়গা নেন চেস্টার। ব্যান্ডের নতুন নাম হয় লিংকিন পার্ক। ২০০০ সালের ৪ অক্টোবরে লিঙ্কিন পার্ক তাদের প্রথম অ্যালবাম হাইব্রিড থিওরি প্রকাশ করে । সে বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত অ্যালবাম হয় সেটি। এরপর একে একে মীটিওরা, মিনিটস্‌ টু মিডনাইট, এ থাউজ্যান্ড সানস্‌ এবং লিভিং থিংস্‌, অ্যালবাম গুলো যথাক্রমে প্রকাশ পায় ২০০৩, ২০০৭, ২০১০ এবং ২০১২ সালে। বেনিংটন সাইড প্রজেক্ট হিসেবে ২০০৫ সালে তার নিজের ব্যান্ড ডেড বাই সানরাইজ-এর আবির্ভাব ঘটান। এই ব্যান্ডটির আত্মপ্রকাশমূলক অ্যালবাম আউট অব এ্যাশেজ ২০০৯ সালের অক্টোবরের ১৩ তারিখে প্রকাশ পায়। বেনিংটনকে "শ্রেষ্ঠ ১০০ হেভি মেটাল ভোকালিস্ট"-এর তালিকায় স্থান দেয় হিট প্যারাডার

তবে ২০১৭ সালে হঠাতই এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলেন চেস্টার! মে মাসের ১৮ তারিখ চেস্টারের অন্যতম বন্ধু  বিখ্যাত আমেরিকান রক আইকন ক্রিস করনেল নিজ বাড়িতে ফাঁসীতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। ক্রিসের মৃত্যুর দুই মাস পর ২০ জুলাই নিজের বাড়িতে ফাঁসীতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন চেস্টারও! সেদিন ছিল ক্রিস এর ৫৩ তম জন্মদিন! ঠিক কি কারণে আত্মহত্যা করলেন চেস্টার সেটা হয়ত জানা যাবে, আর নয়ত চিরদিন হয়ে থাকবে রহস্যাবৃত। তবে চেস্টারের আর লিংকিন পার্ক এর ভক্তদের জন্য এই ক্ষতি অপূরণীয়।


বিদায় Chester Bennington! লিংকিন পার্কে আপনার ১৫ বছরের ইতিহাস আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ থেকে যুগে সংগীতপ্রেমীদের মাঝে! আর সেখানে আপনার হারিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই!!




Comments

  1. Thanks CHESTER for giving me a memorable school life.I will miss you badly.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!