ফুটবল ফরমেশান (৪-৪-২) ঃপর্ব - ১
ফুটবলের জন্মলগ্ন  থেকেই  যেই  বিষয়টা 
নিয়ে  সবচাইতে  বেশি  তর্ক  হয়   তা  হল  ফুটবল  ফরমেশান। একদল  যদি  কোনো  ফরমেশানের  সুবিধা  নিয়ে  হাজির  হয়  তবে  আরেকদল হাজির হয়  তার  দুর্বলতা  নিয়ে । আসলে  উদ্ভাবনী  শক্তি এবং ফুটবল চর্চাই  ফুটবলের পরিবর্তনের  প্রধান কারণ ।যার  কারণে  ফুটবল 
ফরমেশানের  এত  বৈচিত্র ।
 যেকোনো  ফুটবল  দলের  জন্যই  ফরমেশানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ  একটা বিষয়  কারণ এটাই একটা  ফুটবল  দলের  মৌলিক  কাঠামো । এটাই নির্ধারণ  করে  ডিফেন্স  থেকে  অ্যাটাক  পুরো  মাঠে  তার  খেলোয়াড়্ররা  কীভাবে  সজ্জিত  থাকবে । প্রতি  খেলোয়াড়ের  জন্যই  এই  জিনিসটা  জানা  খুব  গুরুত্বপূর্ণ  যে  সে কোন  পজিশনে  খেলবে এবং  তার  সতীর্থরা  কোন  পজিশনে  খেলবে । মোট  কথা , একটা  সফল  ফরমেশানের মাধ্যমে  যেমন  অ্যাটাক  ও  ডিফেন্সের  মধ্যে  খুব  ভালো  সমন্বয়  সম্ভব  তেমনি এর  মাধ্যমে  দলের  খেলোয়াড়দের থেকে সর্বোচ্চ  আউটপুট  বের করাও  সম্ভব । 
আজ   যে   ফুটবল 
ফরমেশানটা  নিয়ে  আলোচনা 
করব  তা  হল  ৪ –
৪ – ২  ফরমেশান । এটা  খুবই 
সুপরিচিত  ডিফেন্সিভ  একটা 
ফরমেশান । এতে  চারজন  ডিফেন্ডার ( ২ জন   সেন্টারব্যাক
 ও 
২ জন  ফুলব্যাক  ) , চারজন মিড ( দুইজন  সেন্টার 
মিড  ও  দুইজন 
উইঙ্গার ) এবং  দুইজন  ফরোয়ার্ড 
থাকে। এই  ফরমেশানটা  সবচাইতে 
জনপ্রিয়  ব্রিটিশদের  কাছে  ।
সুবিধা :
- এই ফরমেশানের সবথেকে বড় দিক হল এর সরলতা । এতে যেমন ডিফেন্সিভ ডেপথ থাকে তেমনি অ্যাটাকারদের সংখ্যাও বেশি থাকে । এতে করে প্রত্যেক খেলোয়াড় তার পজিশন ও খেলার ধরণ কী হবে তা ভালোভাবে বুঝতে পারে ।
- এই ফরমেশানে চারজন ডিফেন্সিভ প্লেয়ারের সাথে চারজন মিডফিল্ডার থাকায় তারা নিজেদের হাফে প্রায় পুরো জায়গাটাই দখল করে রাখে । ফলে প্রতিপক্ষের জন্য পাসিং ফুটবল খেলা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে । এছাড়া অ্যাটাকের সময় যদি ডিফেন্স ও মিডফিল্ডের প্লেয়াররা উপরে ওঠে তাহলে স্কোরিং এর সুযোগটাও বেড়ে যায় ।
- দুইজন ফুলব্যাকের সাথে ডান ও বামদিকে দুইজন মিড থাকায় এই ফরমেশানে খেলা দল সাইড দিয়ে আক্রমণ করার প্রচুর সুযোগ পায় । ফলে ফরোয়ার্ডদের কাছে প্রচুর লং বল ও ক্রস পাঠানো সম্ভব হয় । উইং দিয়ে অ্যাটাক হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স সাইডে চলে আসে । এতে করে মাঝে খালি জায়গা তৈরি হয় যা দুইজন ফরোয়ার্ড কাজে লাঘাতে পারে ।
- এই ফরমেশানটা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যখন দুইজন ফরোয়ার্ডের পারস্পরিক বোঝাপড়াটা ভালো হয় । যদি একজন ফরোয়ার্ডের লং বল ও ক্রস রিসিভ ভালো হয় এবং সে বলটা অন্য ফরোয়ার্ডের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দিতে পারে তবে এই ফরমেশানে ভয়ংকর আক্রমণ তৈরি করা সম্ভব । ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ম্যানইউর কোল ও ইয়র্ক এর জুটি এই ফরমেশানের সবচাইতে ভালো উদাহরণ । ঐ মৌসুমে ম্যানইউর ট্রেবল জয়ে এই জুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
অসুবিধা :
- এই ফরমেশানটা যেহেতু অনেক পুরাতন তাই এর বিপক্ষে কী করণীয় তাই নিয়ে অনেক কাটাছেড়া হয়েছে । এর সবথেকে বড় অসুবিধা এটা খুবই অনুমানযোগ্য । এর ফলে প্রতিপক্ষ দল খুব সহজেই বুঝতে পারে আপনি মাঠে কি করতে যাচ্ছেন ।
- যদি উইঙ্গার হিসেবে খেলা দুইজন মিড অ্যাটাকের পাশাপাশি ডিফেন্সেও ভূমিকা রাখতে না পারে তবে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডের জন্য প্রতিপক্ষের পাসিং আটকানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে ।
- যদি প্রতিপক্ষ দল তিন বা চার জন সেন্টার মিড খেলায় তাহলে তাদের জন্য মিডফিল্ডের দখল নেয়া খুব সহজ হয়ে যায় ।
- এছাড়াও ম্যান মার্কিং এর মাধ্যমে যদি বিপক্ষ দলের মিডফিল্ড দুইজন ফরোয়ার্ডকে আটকে দেয় তাহলে গোল করা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে ।
- বর্তমান ফুটবলে ৭ ও ১১ নং জার্সির যে ভূমিকা তার সাথে এই পদ্ধতি খুবই বেমানান ।

 
 
Comments
Post a Comment