নিবিড়ের গল্প ( পর্ব -৩)

৩.



-জানিনা

- আমার বাবাও একই উত্তর দিয়েছিল

- তাহলে উনি অনেক অমায়িক

নিবিড় বুঝতে পারল তপু রেগে আছে সে তার রুম  থেকে বের হয়ে মাকে  গিয়ে বলল,

-মা আজকে তপু ভাইয়াকে নাস্তাতে পায়েস দিও

-কিন্তু ওগুলোতো তোর জন্য রেখেছি বাবা

-আমি অনেক খেয়েছি

- আচ্ছা

নিবিড় মীমের থেকে তপু সম্পর্কে ভাল ধারনা নিয়েছে তপুর পায়েস খুব পছন্দ

তপু বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে এমন সময় নিবিড় আসল

-       যা পড়তে দিয়েছি তা পড়েছ ?

-      জি

-      এমন কিছু পাইছ যা বুঝ নাই ?

-      না


এরপর  নিবিড়কে  ইচ্ছাবশত কিছু কঠিন  প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল তপু নিবিড় সবগুলোর উত্তর 

ভাল্ভাবেই দিল উলটো পালটা কিছু কঠিন প্রশ্ন করে বসল   অবাক হল তপু কারন একটা 

প্রশ্নের  উত্তর তার মাথায় আসছেনা

-এগুলোর উত্তর কালকে পেয়ে যাবে

- কাল আসবেন আপনি?

- না, মানে পরশু

-ওহ সমস্যা নেই ভাইয়া, এসব উত্তর আপনার না দিলেও চলবে

- কেন?

- কারন , এগুলো আমার সিলেবাস রিলেটেড না


এরইমধ্যে নিবিড়ের মা পায়েস আর চা নিয়ে চলে এল

-      আসসালামু আলাইকুম আন্টি

-      ভাল আছ , বাবা

-      জি

-      নিবিড় ঠিক মত পড়েনা , ওকে একটূ বুঝাইও

-      না , পড়ে তো



তপু পায়েস খেল এরপর নিবিড়কে কিছুক্ষন পড়াল এরিমধ্যে লক্ষ করল নিবিড়ের টেবিলে একটা বই “ALL YOU ZOMBIES” নামটা তার চেনা লাগল কিন্তু কই দেখেছে তা মনে করতে পারলনা বইটি হাতে নিল সে

-এই বইটা পড়া শেষ ?

-হ্যাঁ ভাইয়া , কেন?

কি নিয়ে লেখা?

টাইম ট্রাভেল প্যারাডক্স নিয়ে 

-ওহ

হঠাৎ তার মনে পড়ল । কয়কদিন আগে সে “predestination “ নামে মুভি দেখেছিল ঐ মুভির কাহিনী এই বই থেকে নেওয়া নিবিড়কে পরের দিনে জন্য পড়া দাগিয়ে দিল তপু।এরপর চা খেল সাধারনত তপু চা আর সিগেরেট একসাথে খায় নিবিড়দের বাসা থেকে বের হয়ে সিগেরেট ধরাল সে
তপু চলে যাওয়ার পর মিমকে কল করল নিবিড়

-হ্যালো মিম ।

-নিবিড় ,কি অবস্থা ?

-ভাল

-তপু ভাইয়া কেমন পড়াচ্ছেরে ?

-অসাধারন

- বলিস কি ?

- অনেক ভাল রে

- একদিন পড়েই ভাল বলে ফেললি

- বুঝা যায়


 এলাকায় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল আজ । নিবিড়ের টিম ফাইনালে খেলছে ।লেফট ব্যাক পজিশনে খেলে সে ডিফেন্ডার হলেও অ্যাটাকেও সে সমানে পারদর্শী  তাই সবাই তাকে লেফট উয়িং খেলার জন্য ট্রাই করতে বলে কিন্তু নিবিড় ডিফেন্ডার থাকতেই খুশি নিবিড়ের টিমের ক্যাপ্টেন হল মারুফ আর বিপক্ষ টীমের হল রাকিব মারুফ খেলে 
ডিফেন্স হোল্ডিং মিডফিল্ড পজিশনে তার বল পায়ে রাখার ক্ষমতা আর পাসিং স্টাইল অসাধারণখেলার আগে নিজ টীমের সবাইকে জড়ো করে  শলাকৌশল করতে লাগল মারুফ সবাই মনোযোগ দিয়ে শোন “, বলে সবার দিকে একবার তাকিয়ে নিল মারুফ  রাকিবদের টীম পাসিং ফুটবল খেলে , তাই বল ওদের পায়ে বেশী থাকতে পারে কথা হল   ওদের অ্যাটাক আমাদের চেয়ে কয়েকগুন ভাল তাই আমাদের ডিফেন্স খুব ভাল রাখতে হবে আমরা সুযোগের আশায় থাকব কাউন্টার অ্যাটাকের “, এই বলে নিবিড়ের দিকে তাকাল মারুফ নিবিড় ক্যাপ্টেনের ইঙ্গিত ধরতে পারল পুরো টুর্নামেন্টে নিবিড় কোনো গোল করেনি , কিন্তু তার এসিস্ট ছাড়া গোল খুব কমই হয়েছে আর নিবিড়দের টীম কাউন্টার অ্যাটাকে খেলে বেশী খেলার ফার্স্ট হাফে কোন গোল হয় নি রাকিবের টীমের পায়েই বল ছিল বেশী ওরা কিছু ভাল অ্যাটাক করলেও নিবিড়দের দুর্ভেদ্য ডিফেন্স তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল

 বিরতিতে আবার সবাইকে জড়ো করল মারুফ এভাবে চলতে থাকলে আমরা একটা গোল খেয়েই যাব” , বলল নিবিড়সমস্যা নেই , Stick to the original plan “ , বলল মারুফ কিন্তু  ওরা এক্ষনো পিয়াস আর শিহাব কে নামায় নি , ওরা নামলে আমাদেরকাউন্টারঅ্যাটাকেও কাজে দিবেনা “, বলল রাকিন সে নিবিড়ের টীমের স্ট্রাইকার আমার প্ল্যান অনুযায়ী খেল , গোল হবেই “, আশ্বাস দিল মারুফ খেলা শুরু হল আবার  পয়ষট্টি মিনিটের মাথায় রাকিবের টীমের স্ট্রাইকার ডিবক্সের বাইরে থেকে শুট করে গোল দিয়ে দিল এরপর আরও কয়েকটি সুন্দর অ্যাটাক করল রাকিবের টীম আশি মিনিটে রাকিবের পা থেকে আশা শুট আটকে দিল নিবিড়ের টিমের গোলকিপার কর্নার কিক রাকিব এগিয়ে গেল কর্নার নিতে রাকিবের কর্নার থেকে আসা বল মারুফের মাথায় পড়ল সে হেড দিয়ে বল দিল নিবিড়কে নিবিড় বল নিয়ে  দৌড় দিলবিপক্ষ টীমের গোল্কিপার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল , কারন তার  সামনে ডিফেন্ডার নেই  অনায়াসে নিবিড় ডিবক্সের ভেতর ঢূকে গেল , আর গোল্কিপার সামনে চলে আসল নিবিড়ের , চিপ করে বল টা গোল্কিপারের মাথার উপর দিয়ে গোলপোস্টে ঢুকিয়ে দিল সে স্কোর এখন - দুজন ডিফেন্ডার আর স্ট্রাইকার এর বদলি নামানো হল নিবিড়ের টীমে 

শেষ কয়েক  মিনিট দুটো টীম ই এখন গোলের জন্য মরিয়া  হয়ে খেলছে  বল এখন 
মারুফের পায়ে ছোট ছোট পাস দিয়ে বল টি মীডফিল্ড থেকে এগিয়ে নিচ্ছে সে নিবিড় 
অনেক সামনে সে দেখল তাদের বদলি হওয়া স্ট্রাইকার রুবেল ডিবক্স থেকে দূরে ,আর বিপক্ষ টীমের দুই ডিফেন্ডার ডিবক্সের ভেতরে , আর লেফটব্যাক দৌড়ে আসছে ডিবক্সের দিকে  মারুফ সুন্দর করে লোব দিল নিবিড়কে , ব্ল পেয়ে নিবিড় একটূ সামনে গিয়ে ক্রস করল ডিবক্স থেকে দূরে থাকায় শত চেষ্টা সত্যেও রুবেল বলের নাগাল পেল না , কিন্তু বিপক্ষ টীমের  লেফটব্যক এতক্ষনে ডিবক্সের ভেতরে ঢুকে গেছে  তার পায়ে বলটি লেগে ঢুকে  গেল গোলপোস্টের ভেতরে নিবিড় ছুটে গেল মারুফের দিকে খুশিতে ওকে কোলে নিয়ে ফেলল মারুফ শেষে কিছু অতিরিক্ত সময় দেওয়া হলেও আর কোন গোল হল না
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হল নিবিড়

মাগরিবের আজানের পর সবাই বাসায় চলে গেল কলিং বেল টিপ দেওয়ার আগে মোটা
গলার পরিচিত এক কন্ঠ শুনল নিবিড় তার বাসার ভেতর থেকেই আসছে নিজের কানকে বিশ্বাস হলনা নিবিড়ের কলিং বেলে টিপ দিল সে ২৮ -২৯ বছ্র বয়সীএক যুবক  দরজা খুলল হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল  নিবিড়  এখন নিজের চোখের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলল সে    
­



Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!