এর্নো রুবিকের জাদুর কিউব (A journey to the magical Rubik's Cube) পর্ব-১
Rubik's Cube. অনেকেই হয়তো শুনেছি নামটা। ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার কাছেই এক অদ্ভুত আকর্ষনের বস্তু। কেউ সামনে পেলে তাকে হাতে নিয়ে পরখ করে দেখতেই হবে। প্রথম দেখায় যে কেউ অবাক হয়ে চিন্তা করবে, " কি এটা ?কিভাবে মিলায় এই রুবিক্স কিউব? এর যে রহস্য ভেদ করা দায়...!!" বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় combination puzzle এটি। আমাদের আজকের এই পর্ব সাজানো হয়েছে এর জমকালো ইতিহাস নিয়ে।
শুরু করছি এই অদ্ভুত puzzle এর উদ্ভাবক ও নামের ইতিহাস জেনে নিয়ে। Rubik's cube এর নামকরণ করা হয় হাঙ্গেরিয়ান উদ্ভাবক, আর্কিটেক্ট Professor Ernő Rubik এঁর নামানুসারে। ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার বাবা ও কবি মায়ের ছেলে এর্নো রুবিক সেকেন্ডারী স্কুলে ভাস্কর্যবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ভর্তি হন Budapest University of Technology and Economicsএ এবং পরবর্তিতে এখানেই ১৯৭১ সালে আর্কিটেকচার বিভাগের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে যোগদান করেন। প্রফেসর থাকা অবস্থায়ই তিনি ছাত্রদের ব্যাস্ত রাখার মতো কিছু একটা বানানোর চিন্তা শুরু করেন। শূন্যস্থান এবং বিভিন্ন আর্কিটেকচারাল অবজেক্ট, এসব অবজেক্টের movement ও transformation সবসময়ই তাঁকে বিমোহিত করতো। তিনি সবসময় space, time , object এর মধ্যে পাস্পরিক সম্পর্ক খুঁজতেন , চিন্তা করতেন এসব নিয়ে কিছু বানানো যায় কিনা! এরই ধারবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে অবশেষে উদ্ভাবিত হয় পরবর্তিতে পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে উঠা Puzzle Rubik's Cube. অবশ্য রুবিক এর নাম দিয়েছিলেন Magic Cube. ১৯৭৫ সালে নিজের নামে পেটেন্ট করলেও পরবর্তিতে ১৯৮০ সালে IDEAL Toy Corp. নাম একটি খেলনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে এর স্বত্ব বিক্রয় করে দেন। এরপর থেকেই সারাবিশ্বে এর মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। এর জন্য যথেষ্ট পুরস্কৃতও হন রুবিক। পরপর ৩ বছর ইউরোপের দেশ গুলোর মধ্যে Best Toy Award তাঁর দখলে ছিল।
শুরুর দিকে রুবিক কাঠ ও রাবার ব্যান্ড দিয়ে এটি বানানোর চেষ্টা করেন। রুবিক চেষ্টা করছিলেন এমন কিছু একটা বানাতে যেটার প্রত্যেকটা আলাদা অংশ নিজেদের ইচ্ছামতো ঘুরতে পারবে এবং তা হবে পুরো কিউবের Structure এর কোন ক্ষতি না করেই। রুবিক কাঠকেই বেছে নিয়েছিলেন, কারণ তাঁর কাছে কাঠকে কাজ করার সবচেয়ে সহজ জিনিস মনে হয়েছিল যার জন্য ভারী যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। এর প্রথম prototype যখন তিনি তাঁর ছাত্রদের দেখা, তাঁর ছাত্ররা সেটিকে অত্যন্ত পছন্দ করলো। এতে রুবিকের উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। তিনি হাঙ্গেরীর কিছু ম্যানুফ্যাকচারারের সাথে যোগাযোগ করে প্লাস্টিক দিয়ে আরো ভালো কিউব বানালেন। এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।
অন্যান্য সব কিছুর মতোই রুবিক্স কিউব এর যাত্রাও খুব একটা সুখকর ছিল না। ১৯৮০ সালে IDEAL Toy Corp. এর পেটেন্ট কিনে নেওয়ার পরে তারা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে লাগলো। ১৯৮০ সালেই এটি German Best Game of the Year হিসেবে নির্বাচিত হয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮২ এরমধ্যে সারাবিশ্বে প্রায় ২০০ মিলিয়ন রুবিক্স কিউব বিক্রয় হয়! তখন এটি একটি উন্মাদনায় পরিণত হয়েছিল। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই এই উন্মাদনায় যেন ভাটা পড়ে গেল। সারাবিশ্বে এর বিক্রি আশংকা জনকভাবে কমে যায়। অক্টোবর, ১৯৮২ এর The New York Times লিখেছিলো , "The Craze has died." . এরপর '৮০ ও '৯০ দশকে খুব একটা বিক্রি হয়নি এটি।
আবার ২০০০ সালে দিকে হঠাৎই রুবিক্স কিউব তার হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে শুরু করে। ২০০১, ২০০৩ এ যুক্তরাষ্ট্রে এর বিক্রি প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়! The Boston Globe লিখে, "Becoming cool to own a cube again." এরপর ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো ৮৩ জন প্রতিযোগীকে নিয়ে World Rubik's Games Championship অনুষ্ঠিত হয়। এই টুর্নামেন্টের ফসল হিসেবে ২০০৪ সালে গঠিত হয় World Cube Association . এরপর থেকেই নিয়মিত এর আয়োজন হয়ে আসছে।
একটি রুবিক্স কিউব এর ছয়টি Face এ ছয়টি আলাদা color এবং সব মিলিয়ে ২৬ টি আলাদা piece রয়েছে। এই সবগুলো piece এর যত ধরণের কম্বিনেশন সম্ভব তা যোগ করলে প্রায় ৪৩ কুইন্টিলিওন হয়! অর্থাৎ প্রায় ৪৩ লক্ষ কোটি কোটি! যদি কেউ প্রতিবার ঘুরাতে ১ সেকেণ্ড করেও সময় নেয় তাহলে তার সকল সম্ভাব্য কম্বিনেশন পেতে ১৪০০ ট্রিলিয়ন বছর সময় লাগবে! বলে রাখা ভালো আমাদের এই বিশ্বভ্রম্মান্ডের বয়স ১৪০০ বিলিয়ন বছর মাত্র!
এই পর্বের শেষ করছি রুবিক্স কিউবের বিশ্ব রেকর্ড ও বাংলাদেশের রেকর্ড সম্পর্কে বলে। পৃথিবীর দ্রুততম ৩*৩*৩ রুবিক্স কিউব সল্ভ করার রেকর্ডের অধিকারী Feliks Zemdegs এর। ২০১৬ সালে POPS open এ মাত্র ৪.৭৩ সেকেন্ডে রুবিক্স কিউব মিলিয়েছিল ফেলিক্স! এছাড়াও Jawa Timur Open 2016 এ Mats Valk এর ৪.৭৪ সেকেন্ড এর রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশেও এখন যথেষ্ট ভালো কিউবার তৈরী হচ্ছে এখন। সাকিব ইবনে রশিদ ঋভু বর্তমানে বাংলাদেশের সেরা কিউবার। যার নিজস্ব বেস্ট হচ্ছে মাত্র ৬ সেকেন্ড। জাতীয় পর্যায়ে একক সল্ভ ৭.১৮ সেকেন্ড এবং গড়ে ৮.৫৭ সেকেন্ড এর অনন্য কীর্তি রয়েছে এই কিউবার এর। তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যযনরত রয়েছেন।
আমাদের আজকের পর্ব এখানে ইতি টানছি। আগামী পর্বগুলোতে কিউব সলভিং নিয়ে বিস্তারিত থাকছে। মাথা খাটানোর খোড়াক হিসেবে কিউব ছড়িয়ে যাক সবার হাতে হাতে। হ্যাপী কিউবিং 😊😊 .
Comments
Post a Comment