ইতিহাসের পাতায় কলিঙ্গ

Image result for kalinga war ashoka

২৬১ খ্রিস্টপূর্ব। মৌর্য সম্রাট অশোক তাঁর রাজত্বের অষ্টম বছরে পদার্পণ করলেন। পিতা বিন্দুসারের নীতি গ্রহণ করে তিনি জয় করে যাচ্ছিলেন একের পর এক রাজ্য। প্রায় সমগ্র দক্ষিনভারত তখন তাঁর দখলে। নিজের হিংস্রতার কারণে তিনি সাধারণের কাছে ‘চন্ডাশোক’ নামে পরিচিত ছিলেন...

এমনই এক সময়, একদিন রাজ্যসভায় আলোচনা হচ্ছিল বিজয় হওয়া রাজ্য গুলো নিয়ে। এসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোকের কাছে প্রস্তাব করেন, তিনি যেন এ রাজ্য জয়ের মধ্যে কলিঙ্গ আক্রমণ করেন, পিতামহ  চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য যে ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন,সে স্বপ্নকে পূরণ করেন। অশোক তাঁর এ প্রস্তাবে সাড়া দেন।

হয়ে যায় ইতিহাসের সবচে ভয়াবহ এক যুদ্ধের পরিকল্পনা। সর্বশক্তি  নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়।

কলিঙ্গ রাজ্য। দয়া নদীর ধারে ধৌলি পাহাড়ের কাছে সমবেত হল মগধের ৬০০০০ পদাতিক সৈন্যদল। তাদের সাথে ছিল ১০০০০ অশ্বারোহী সেনাদল। প্রায় ৭০০ হাতিও সেখানে হাজির করা হয়, যেগুলো যে কোন মুহূর্তে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে ছিল প্রস্তুত।

দুই পক্ষের সেনাবাহিনীই প্রস্তুত। কিন্তু অশোক তখনো যুদ্ধস্থলে এসে পৌছাননি। এদিকে মগধের সেনাপতির আর তর সইছিল না। তিনি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন ঝাপিয়ে পড়তে। শুরু হল 'কলিঙ্গের যুদ্ধ’।

Image result for kalinga war ashoka
যুদ্ধের ভয়াল সেই রূপ
যুদ্ধের প্রথম অবস্থায় কলিঙ্গের কাছে কিছুটা অসহায় হয়ে পড়ে মগধের সেনারা। ফলে পিছু হঠতে হয় তাদের। কিন্তু এরই মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে হাজির হন স্বয়ং অশোক। তাঁকে দেখে উজ্জীবিত হয় সেনারা। শত্রুর উপর দ্বিগুণ ক্ষিপ্রতায় ঝাপিয়ে পড়ল তারা। ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ আরম্ভ হল। অশোক নিজেও এই হত্যাযজ্ঞে অংশ নেন। সংঘটিত হয় এক রক্তাক্ত যুদ্ধ,যার রঙ্গে লাল হয় কলিঙ্গের প্রান্তর।দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় ১ লক্ষ মানুষ হতাহত হয়। আর বিজয় লাভ করলেন অশোক।

যুদ্ধ জয়ের পর অশোক বের হন যুদ্ধপ্রান্তরে। তখন সেখানে পড়ে ছিল হাজার হাজার মৃতদেহ। নারী পুরুষ বৃদ্ধ কেউই যেন বাদ যায়নি এ ভয়াবহতা থেকে। এ অবস্থা দেখে অশোক হতভম্ব হয়ে পড়েন। একি করলেন তিনি!  হাটতে হাটতে দেখতে পান, এক মহিলা করুণস্বরে কাঁদছে। কাছে যেতেই মহিলা অশোককে চিনতে পারে। ক্ষোভের সাথে বলে ওঠে,’ তোমার নিষ্ঠুরতার জন্যেই আজ আমি স্বামী-সন্তান হারা। এখন আমার বেঁচে থেকে কি লাভ?’

 এসব দেখে ও শুনে অশোক ভীষণভাবে আলোড়িত হন। বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন খুব।  প্রতিজ্ঞা করেন, আর রাজ্য জয় নয়। গ্রহণ করেন বৌদ্ধধর্ম। অহিংস নীতি গ্রহণ করে রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন।দেশে বিদেশে প্রচার করতে শুরু করেন বৌদ্ধধর্ম। জয় করেন মানুষের মন। উদিত হয় শান্তির সূর্যোদয়। 

Image result for kalinga war
শান্তির পথে ফিরে এলেন অশোক



 অশোক প্রমাণ করেন, যুদ্ধ নয় , শান্তিই এনে দিতে পারে প্রকৃত সুখ। যুদ্ধ হয়ত রাজ্য জয়ের জন্যে যথেষ্ট, কিন্তু মানবমন জয়ের জন্যে নয়।

Image result for kalinga war ashoka
দয়া নদীর তীর, এখানেই সংঘঠিত হয়েছিল কলিঙ্গ যুদ্ধ
                                           

Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!