কার্ডিফের কাব্য

ভরাডুবি , লজ্জা , হার , অপমান এইগুলো বাংলা ভাষার খুবই পরিচিত শব্দ । শব্দগুলোর সাথে আরেকটু গভীরভাবে পরিচয় আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের মাঠে নামা ও ওই শব্দগুলো ছিল নিত্যসঙ্গী । সময় বদলালো । আসল নতুন কিছু শব্দ। চমক , উন্নতি , আফসেট, পটেনশিয়াল। এখন আরেকটা সময় চলছে । অবশ্য শব্দের অনেক ঘাটতি এখন। একাটাই শব্দ । জয়!!

২০১৭ সাল।জুনের ৯ তারিখ । বিকাল ৩-৩০। অনেকেই টিভি খুলে বসল। প্রিয় দলের খেলা , প্রিয় দেশের খেলা । প্রকৃতি কিছুটা হতাশ করল । টস হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ । ব্ল্যাক ক্যাপদের দারুণ শুরু। ৭ ওভারে ৪৬ রান। বোলিংয়ে গতিতারকা তাসকিন। ৮ম ওভারের প্রথম বলেই হার্ডহিটার লুক রঞ্চিকে সাজঘরের পথ দেখায় বাংলাদেশ। জেগে উঠল টাইগার বাহিনী। একদিকে রুবেল , তাসকিনের গতি অন্যদিকে মাশরাফি , মুস্তাফিজ ও সাকিবের নিয়ন্ত্রিত বোলিং । রান তুলতে হাঁসফাঁস করতে লাগলো কিউইরা ।

 ৪৩ ওভারে ৪ উইকেটে ২২৮ রান নিউজিল্যান্ডের । হয়ত ২৯০ – ৩০০ চিন্তা করছিলো তারা । এই অবস্থায় বোলিংয়ে মোসাদ্দেক । বাংলাদেশিদের কপালের ভাঁজ ও কিউইদের মুখের হাসি সমানুপাতিকভাবে চওড়া হল । কিন্তু তিনি যে ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক!!! তার সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে মোসাদ্দেক ধসিয়ে দিল কিউই মিডল অর্ডার । ধুঁকতে  ধুঁকতে ২৬৫ তে পৌঁছালো কিউইরা । লক্ষ্যটা ২৬৬ । পারবেন তামিমরা??

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ । ক্রিজে টুর্নামেন্টে ২২৩ রান করা ইনফর্ম তামিম ইকবাল । সঙ্গী হার্ডহিটার সৌম্য ।১ম ওভারের ২য় বলেই এলবির জোরালো আবেদন । আঙ্গুল উঠল আম্পায়ারের । তামিমের চটজলদি রিভিউ । কাজ হল না । অনফিল্ড ডিসিশন । প্যাভিলিয়নের পথে তামিম । রং হারালো উৎসব । সাব্বিরের প্রতি- আক্রমণ । ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারি । গ্যালারিতে উন্মাদনা । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেন সাউদি । সাব্বিরও আউট । কট বিহাইন্ড । সৌম্যরও লাল বাতি জ্বলল । সাউদির ভেতরে ঢোকা বলে তিনিও পরাস্ত । পারলেন না মুশফিকও  মিলনারের গতি সামলাতে। বোল্ড!!!

৩৩ এ ৪ উইকেট নাই । কে যাবে সেমিতে ?? কিউইরা নাকি অজিরা । আলোচনা শুরু । ক্রিজে মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব । কারো ব্যাটে রান নাই । কিছুটা স্থির হলেন দুইজন । তারপর?? তারপর ছক্কা । নিশামের বলে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে ।  রিয়াদের ব্যাট যেনো কথা বলতে শুরু করল । উইকেটে জমে গেলেন পাগলাটে সাকিব আর বিতর্কিত রিয়াদ। ২৯ ওভারে ১০০ রান পূরণ করল এই জুটি । ৪৪ ওভারে ২০০ । মিলনেকে ৬ মেরে সাকিবের শত রান পূরণ । জিততে বাকি ৯ রান । সাকিবের বিদায় । সাবলীল মোসাদ্দেক । বোল্টকে চার মেরে রিয়াদের শতক । জিততে লাগে ২ রান । মোসাদ্দেকের উইনিং শট । বাংলাদেশের ৫ উইকেটে জয় । কিউইদের নিরাপদে বিমান ভ্রমণের শুভেচ্ছা জানালো ম্যাশ বাহিনী ।

একটু পেছনে আসি । সাকিব রিয়াদকে নিয়ে যাদের আপত্তি আছে তাদের জন্য জানিয়ে রাখি এটা ওডিআই তে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি । মন ভরে নাই ?? তাহলে আরও শুনুন ৫ম উইকেটে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এর চাইতে বড় জুটি আর নাই । এখনও মন না ভরলে পুরো জুটিটা আরেকবার দেখেন । কাট , ড্রাইভ , পুল , পেরিস্কোপ ক্রিকেট এর সব ধরণের শট সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবেন। সিংগেলস ডাবলসে রানের চাকা কীভাবে সচল রাখতে হয় জেনে যাবেন।

আর হ্যাঁ , জেতার পর ড্রেসিংরুমের বেলকনিতে মাশরাফির উল্লাসটা দেখে নেবেন। মনটা ভরে যাবে।