এল খুশির ঈদ!
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে
তোর আসমানী তাকিদ…
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা
শেষে আসছে ঈদ। রাত পোহালেই আসবে সেই আনন্দের সকাল। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ঈদ আনন্দের
প্রস্তুতি। ছেলে বুড়ো সবাই মেতে উঠবে ঈদের আনন্দে। এ আনন্দের নেই কোন সীমা পরিসীমা।
ইতিমধ্যে অনেকেই তাদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে গেছেন নাড়ির টানে নিজ ঠিকানায়,
পরিবার পরিজনদের সাথে কাটাতে। তবে অনেকে আবার শহরেই রয়ে যান, এখানেই ঈদ পালন করেন।
ঈদের আনন্দ কোন যুগেই কম
ছিল না, তবু এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে ঈদ যেন তার
আগের জৌলুস হারিয়েছে, যোগ হয়েছে কিছুটা কৃত্রিমতা। ব্যস্ততার কারণে এখন অনেকেই সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেছে নেন ঈদ উদযাপন আর শুভেচ্ছা জানানোর উপায় হিসেবে। বিশেষ করে
শহুরে ঈদে তা বেশ লক্ষ্য করা যায়। আজকাল আমরা
খুব সহজেই ফেসবুকেই ঈদের আনন্দের বেশিরভাগটা দিয়ে ফেলতে পারি, ঘরে বসেই সবার সাথে
শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারি।খুব সহজেই সুন্দর কোন মেসেজ পাঠিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে পারি।
প্রযুক্তির এই বিপ্লবের আগে এমনটা ঠিক ছিল
না। তখন ঈদের শুভেচ্ছা জানাবার একটা বড় মাধ্যম ছিল ঈদ কার্ড। রোজার শুরুতেই পাড়ার মোড়ে
মোড়ে বসে যেত রঙ বেরঙ্গের ঈদ কার্ডের ছোট ছোট দোকান। শিশুরাই মূলত কার্ড গুলো কিনত,
এরপর কাছের বন্ধুদের ছোট ছোট ঈদ বার্তা লিখে তা বন্ধুদের উপহার দিত। শুধু শিশুই নয়,
বড়দের মাঝেও এই কার্ড দেয়ার রীতির চল বেশ ছিল।
চাঁদরাত ছিল প্রত্যেকের
কাছে ঈদের আগে আরেকটি ছোটখাট একটি ঈদ। এই রাত আসার দু তিনদিন আগ থেকেই সবার মাঝে, বিশেষত
শিশুদের মাঝে এক অপার কৌতুহল বিরাজ করত- এবার ২৯, নাকি ৩০ রোজা। এ নিয়ে চলত একেকজন
হয়ে উঠত বিশেষ তার্কিক, যুক্তি চলত নিজেদের পক্ষে বেশ জোরেসোরে। অবশেষে চাঁদ উঠলে সবার
মাঝে বয়ে যেত আনন্দের জোয়ার। চাঁদ দেখার জন্যে প্রতিটি বাড়ির ছাদে সবাই জমাত ভিড়। শিশুরা
দল বেধে মাঠে নেমে পড়ত, চাঁদ দেখা হয়ে গেলে সেকি আনন্দ সবার মাঝে। পাড়ায় পাড়ায় ফুটে
উঠত আতসবাজি, অনেক সময় রঙ্গিন তারাবাতি। ঘরে ঘরে মা বোনেরা রান্নার তদারকিতে নেমে পড়তেন,
আবার অনেকে নেমে পড়তেন নিজেদের হাতটাকে মেহেদির রঙ্গে রাঙ্গাবার জন্যে।
ঈদের সকালেই সবাই খুব ভোরে
উঠে পড়ত আনন্দের রেশে। চলত গোসলের প্রস্তুতি। আর শীতের সকালে যদি গোসল করতে হত, তবে
তা ছিল প্রায় বিশ্বজয় করবার মতই। ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে গোসল সারবার আনন্দও কিছু কম
ছিল না। এরপরেই নতুন জামা পরে চলত সেমাই দিয়ে মিষ্টিমুখ, তারপর পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদগাহের দিকে যাওয়া।
ঈদের সকালে নামাজ আদায়
করে সবাই বেড়িয়ে পড়ত ঘুরতে। আত্মীয় স্বজন বন্ধু
বান্ধব, বাদ যেত না কারো বাড়ি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলত শুভেচ্ছা বিনিময়। ছোটরা এক্ষেত্রে
সবার চাইতে একটু বেশি এগিয়ে থাকত, কারণ প্রতিটি বাড়িতে গেলেই যে পাওয়া যেত ঈদ সেলামি!
কে কত ঈদি পেল এনিয়ে চলত তাদের মধ্যে চলত খুনসুটি।
বন্ধুরাও এঁকে অন্যের বাড়িতে দল বেধে ঘুরতে যেত শুভেচ্ছা জানাতে। আর বাড়িতে বাড়িতে
মুখরোচক খাবার দাবারের আয়োজন তো ছিলই।
বিকেলে অনেকেই দল বেধে
ঘুরতে বেরিয়ে পড়ত। হাটতে হাটতে কখনও রাস্তার পাশ ধরে, কখনও বা রেল লাইন ধরে চলে যাওয়া
হত বহুদূর। এরপর কোন একটা মাঠের ধারে বসে গোল হয়ে চলত আড্ডা। কথা চলত, চলত অনেক গল্প।
সন্ধ্যা হলেও যেত ফুরতো না সেইসব কথা আর গল্পগুলো।
ঈদ আনন্দের সেইসব দিনগুলো
আজো আমাদের আলোড়িত করে। ছেলেবেলার সেই সব ঈদ গুলো ছিল যেন সোনালী সময়, সেই ঈদ গুলোর
অনেক আনন্দই আজ আর নেই। প্রযুক্তির সুবাদে দূরত্ব হয়ত আজকাল কোন ব্যাপারই না, সহজেই
জানানো যায় ঈদ শুভেচ্ছা, কিন্তু সেই কৃত্রিমতা ছাড়া ঈদ আনন্দ কি আর পাওয়া যাবে কখনও?
ঈদ মানেই আনন্দ, সবার জীবনে
সে আনন্দ আসুক মহান স্রষ্টার করুণাধারা হয়ে।
ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার।
ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার।
সবাইকে ঈদ শুভেচ্ছা। ঈদ
মোবারক!!
Comments
Post a Comment