চলচ্চিত্রের সেইসব দিনগুলি! - পর্ব ২
ষাটের দশকে আমাদের চলচ্চিত্র
মূলত ষাটের দশকেই বাংলা
চলচ্চিত্রে ঘটে যায় এক বিপ্লব। দেশে তখন চলছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর
বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ তখন রাজপথে। কিন্তু স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের নিয়ন্ত্রনের কথা ভেবে
তখনকার ছবিগুলোতে আন্দোলনের ব্যাপারটি খুব একটা তুলে ধরা হত না।
এমনই এক সময়ে চলচ্চিত্রের আকাশে উদিত হলেন এদেশের সর্বকালের সেরা
পরিচালক জহির রায়হান, যিনি তার লেখনীর মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সচেষ্ট
ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি নির্মাণ করেন তাঁর সেই বিখ্যাত ছবিটি- জীবন থেকে নেয়া। এ ছবিতে
তিনি সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব সূচারুভাবে রূপকের ব্যবহারে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। বাঙালীর মনে মূলত এই সিনেমাই বুনে
দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বীজ!
'জীবন থেকে নেয়া' ছবির কয়েকটি দৃশ্য
ষাটের দশকে আমরা জহির রায়হানের
বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি দেখতে পাই। যার মধ্যে যে নদী মরুপথে (১৯৬১), কখনও আসেনি
(১৯৬১) , সোনার কাজল (১৯৬২), কাচের দেয়াল (১৯৬৩) সঙ্গম (উর্দু , ১৯৬৪) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
চলচ্চিত্রকার হিসেবে জহির রায়হান এ সময়ের সবচে উল্লেখযোগ্য একজন।
এসময় নির্মিত হয় বেশ ককেকটি
সামাজিক চলচ্চিত্র। যার মধ্যে সালাহউদ্দিনের মরূপথে(১৯৬১), সূর্যস্নান (১৯৬২) , ধারাপাত
( ১৯৬৩) ইত্যাদি পেয়েছিল দর্শকপ্রিয়তা।
ষাটের দশকেই আবির্ভাব ঘটে
কীর্তিমান পরিচালক খান আতাউর রহমানের। ১৯৬৩ সালে তিনি নির্মাণ করেন অনেক দিনের চেনা,
যা তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি। জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে ‘ এ খাঁচা ভাঙব
আমি কেমন করে’ গানটিতে তিনি নিজেই লিখে সুর দেন, ছবিতেও তাঁকে গানটি গাইতে দেখা যায়।
ষাটের দশকের চলচ্চিত্রে
আমরা দেখতে পাই ফতেহ লোহানী অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি, যা আজো মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
এর মধ্যে রাজা এলো শহরে (১৯৬৪), তানহা (১৯৬৪), বেহুলা ( ১৯৬৬), আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)
মায়ার সংসার (১৯৬৯) উল্লেখযোগ্য। বিখ্যাত পরিচালক আবদুল জব্বার খান বানান জোয়ার এলো
(১৯৬২), নাচঘর (উর্দু, ১৯৬৩), বাঁশরী(১৯৬৮) ইত্যাদি ছবি।
ষাটের দশকই মূলত বাংলা
ছবির বিকাশের স্বর্ণযুগ। গণমানুষের আন্দোলনকে বেগবান করতে এ সময়ের চলচ্চিত্র পালন করেছিল এক
অভূতপূর্ব ভূমিকা।
Comments
Post a Comment