নিবিড়ের গল্প ( পর্ব - ২)
নিবিড় তার রুমে বসে বই পড়ছিল । মার ডাক শুনে চমকে গেল সে। নিবিড়ের মা খুব রেগে গেলে
ওকে “এই শয়তান” –বলে ডাকে । নিবিড় বুঝতে পারলনা সে কি কারনে দোষী ।
-কি হল।
- -তুই তপুকে কি বলেছিস ?
-
- কেন ?
- -ও , একটু আগে ফোন দিয়ে বলল তোকে পড়াবেনা , তোর ব্যবহার ওর ভাল লাগেনি ।
- -আমি ভাইয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি । শুধু বলসি আমাকে পড়াতে আসার আগে সিগেরেট না
খেয়ে ঢুকতে ।
- -তপু সিগেরেট খায় এটা তার পার্সোনাল বিষয় ।
- -আমার সিগেরেটের গন্ধ সহ্য হয় না ।
- -মানিয়ে নিতে হয় বাবা। তোর বাবাও সিগেরেট খেয়ে বাসায় ঢুকে ।
- -সেটা ভিন্ন জিনিস মা ।
- --তুই ওকে ফোন করে সরি বলবি ।
- --আমার অপরাধ ?
- -মুখে মুখে তর্ক করবিনা । যা বলছি তাই কর ।
নিবিড় তপুকে কল করল ।
- - হ্যালো ।
- -হ্যাঁ কে?
- -আসসালামু আলাইকুম । আমি নিবিড় বলছি ।
- -কোন নিবিড় ?
- - কালকে আপনি আমাকে পড়াতে এসেছিলেন ।
- -ওহ ,বলো ।
- - ভাইয়া দেখেন , আপনি সিগেরেট খান সেটা আপনার পার্সোনাল বিষয় । এ নিয়ে কথা বলা আমার
ঠিক হয় নাই । স্যরি ।
- -তুমি বুঝতে পারতছ তোমার আচার ব্যবহারে অনেক সমস্যা ?
- -না ,
- -কি?
- - কিন্তু এটা জানি আমার সিগেরেটের গন্ধে অনেক সমস্যা । আপনি আমাকে পড়ানোর পর
সিগেরেট খাইয়েন সমস্যা নেই !
- - কালকে কয়টায় আসবেন?
- - কাল আসবনা । তোমাকে আমি পড়াবনা ।
তপু কল কেটে দিল । এখনকার ছেলেমেয়ে অনেক বেয়াদব । কার সামনে কি বলতে হয় তা
জানেনা ।
- - এই মামা , একটা বেন্সন দাও তো ।
চায়ের দোকানে বসে তপু সিগেরেট আর চা খেল । বাসায় সিগেরেট খাওয়ার উপায় নেই ।
নিবিড় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল । রবার্ট এ হেইনলেইন এর “Al you zombies’’ । টাইম প্যারাডক্স নিয়ে লেখা । নিবিড় খুব মজা পাচ্ছে বইটা পড়ে যদিও পুরোটাই ইংরেজি তে লেখা। গল্পের নায়ক একজন টাইম এজেন্ট । তার কাজ হয় টাইম ট্রাভেল করে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বিরত রাখা । এক পর্যায়ে তার অতীতে গিয়ে নিজের সাথে দেখা হয় তার । তখনই বাধে বিপত্তি ।
নিবিড়ের মা তপুকে ফোন দিল ।
-নিবিড় , এই শয়তান ।
নিবিড় বুঝতে পারলনা সে আবার কি দোষ করল ।
তপু শেষ পর্যন্ত রাজী হল নিবিড়কে পড়াতে । রাজী না হয়ে উপায় নেই । তপুর চাচী অর্থাৎ মীমের মা তপুকে রিকোয়েস্ট করল ।
তপুদের জয়েন্ট ফ্যামিলি, ছোটকালে তার মার মারা যায়। চাচীর কোলে পিঠে সে বড় হয়েছে । তপুর কোন খালাও নেই । মার অভাবটা তার চাচী পূরন করে দিয়েছে ।
পরদিন বিকালে তপু আসল নিবিড়দের বাসায় ।
পড়াতে গিয়েই তপুর প্রথম প্রশ্ন “তুমি নিজে সিগেরেট খাও , আবার সিগেরেটের গন্ধ সহ্য হয় না
কেন ?"
নিবিড় অবাক হয়ে তপুর দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-মানে?
- মানে হল , তুমি কিভাবে বুঝলে যে আমি বেনসন খাই ?
- আমার বাবা বেনসন খায় তাই ।
- তুমি কিভাবে বুঝলে যে উনি শুধু বেনসন খায় ?
- উনার পাঞ্জাবির পকেটে বেনসনের প্যাকেট থাকে ।
- অন্যের পকেট হাতানো ভাল অভ্যাস না ।
- আমি বাবার পকেট হাতাই না ।
-তাহলে কি সপ্নে দেখছিলা?
-বাসায় দরজার চাবি দুটো । বাবার কাছে একটা থাকে । মাঝে মাঝে ওটা নিতে বাবার পাঞ্জাবির
পকেটে হাত দিতে হয় ।
তপু আর কিছু বললনা । এই ছেলের সাথে প্যাচাল করে আর লাভ নেই .................( চলবে )
Comments
Post a Comment