ফিরে দেখি ফিরে আসা

২০১০ সালের কথা ।    জোয়াকিম লোর অধীনে বিশ্বকাপ খেলতে আসে তরুণ এক জার্মান দল । চারপাশে কানাঘুষা শুরু হয় । তরুণ , অপ্রস্তুত দল এইবারের জার্মানি । অভিজ্ঞতাই  নাকি  বড় মঞ্চের মূল হাতিয়ার । ধীর ধীরে কোয়ার্টার ফাইনালের  পথে পা বাড়াল তারা  । প্রতিপক্ষ মেসি ম্যারাড়োনার আর্জেন্টিনা ।৪ – ১ ব্যবধানে  জিতল জার্মানি । যান্ত্রিক ফুটবলের ভয়ংকর সৌন্দর্য দেখল গোটা বিশ্ব । জার্মান ওই তরুণদের কাছে আসতে লাগলো ইউরোপের বড় বড় ক্লাবের লোভনীয় সব প্রস্তাব। জার্মান এই তরুণদের গড়ে উঠার গল্পই শোনাব আজ...........
.



বুন্দেসলিগায় , টিভি মার্কেটের সাথে সমৃদ্ধ ক্লাবগুলি  বিদেশিদের সংখ্যা দ্বিগুণ করে 17 শতাংশ থেকে পাঁচ বছরের (১৯৯২-১৯৯৭)মধ্যে 34 শতাংশ করে। স্ট্রাইকারদের জন্য হতাশ, জাতীয় ব্যবস্থাপক ভোগটস  জার্মান নাগরিকত্বের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত শেন ডান্ডির উপর নজর রাখেন ।ডেনডি 1997 সালের জানুয়ারিতে তার পাসপোর্ট পেয়েছিলেন কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নির্ধারিত খেলার আগে তিনি ইনজুরিতে পড়েন ।  এতে করে জার্মানির হয়ে তার আর মাঠে নামা হয় নি। ভোগটসের উত্তরাধিকারী, এরিক রিববেক ব্রাজিলিয়ান ফরওয়ার্ড পাওলো রিঙ্ককে দ্রুত জাতীয় দলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি জার্মানদের হয়ে ১৩ টি ম্যাচ খেলেন।

১৯৯৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে  হতাশাজনক কোয়ার্টার ফাইনালের পর তারা বুঝতে পারেন যথেষ্ট প্রতিভা উঠে আসছে না। ২০০০ সালে মৌসুমের শুরুতে বিদেশীদের  সংখ্যা  শতকরা ৫০ ভাগ বেড়ে যায়। জার্মান ফুটবল ফেডারেশন  ফ্রেঞ্চ সিস্টেমের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা একই রকম কিছু করবে।

১৯৯৯  সালের মে মাসে, এফ.এ. ভাইস প্রেসিডেন্ট বেকেনবাউর, প্রথম-দলের ম্যানেজার রিববেক, বেয়ার লিভারকুসেনের জেনারেল ম্যানেজার রেইনার কালমন্ড এবং ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের এফএ ডিরেক্টর ডিট্রিচ ওয়াইজ তরুণ জার্মান ফুটবলারদের প্রস্তুত করার জন্য একটি নতুন ধারণা উপস্থাপন করেন। সারা দেশে, ১২১টি জাতীয় প্রতিভা কেন্দ্রে ১০-১৭ বছর বয়সের ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচ বছরের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন খরচে দুটি দীর্ঘমেয়াদী কোচ নিয়োগের পরিকল্পনাও  হাতে নেয়। এছাড়াও  তারা ৩৬ টি পেশাদার ক্লাবের জন্য যুব একাডেমী নির্মাণের কথা ভাবে।


 ২০০০ সালের জুলাই মাসে জার্মানি যখন ২০০৬  বিশ্বকাপ আয়োজন করার কথা জানতে পারে , তখন ক্লাব এবং ফেডারেশন একসঙ্গে যুবদের উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করে। ২০০২-০৩ সালে, প্রথম বিভাগে বিদেশীদের  সংখ্যা 60 শতাংশে পৌছায়। বিপুল আর্থিক মন্দার  মুখোমুখি হলে তারা  সমস্ত বিদেশী ফুটবলারদের ছেড়ে দিয়ে তাদের নিজস্ব যুব দলগুলি থেকে তরুণদের নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বদেশী খেলোয়াড়দের দেখতে দর্শকরাও স্টেডিয়ামের দিকে ঝোঁকেন। ২০০৪ সালের হতাশাজনক ইউরোরপর জার্মান ম্যানেজার রুডি ভোলার পদত্যাগ করেন।এরপর ক্লিনসম্যানকে দলের দায়িত্ব দেয়া হয়। ক্লিনসম্যানের পর দায়িত্বে আসেন তার সহকারী জোয়াকিম লো । তার অধীনেই বিশ্ববাসী পরিচিত হয় ওজিল,খেদিরা,মুলারদের সাথে ।

মেধা ও প্রতিশ্রুতির মিশেলে তৃণমূল পর্যায়ে তারা যে স্বপ্নের বীজ বুনেছিল সেটাই মূলত আজ জার্মানদের বিশ্ব ফুটবল শাসন করার পথ দেখাচ্ছে।

Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!