চলচ্চিত্রের সেইসব দিনগুলি! - পর্ব ১




সোনালী দিনের মিষ্টি প্রেম!
'মুখ ও মুখোশ ছবির একটি দৃশ্য 
     বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই চলচ্চিত্রপ্রিয়। প্রযুক্তির দৌরাত্বের যুগ আসবার আগে একসময় এদেশের মানুষের বিনোদনের একমাত্র খোরাক ছিল চলচ্চিত্র। আমাদের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ সব কিছু জড়িয়ে আছে চলচ্চিত্রে। একসময় আমাদের সিনেমাহল গুলো থাকত মানুষে সয়লাব। সিনেমা কখনও কাঁদাত, কখনও হাসাত, কখনও বা দিত জীবনবোধের গভীর কোন দিকের সন্ধান। অবাক হচ্ছেন? হবারই কথা! আজ যে আমাদের সেই স্বর্ণযুগ নেই আর!

আজকের লেখাটি মূলত এদেশে চলচ্চিত্রের একদম প্রথম দিককার কাহিনী নিয়ে।

    ব্রিটিশ আমলে ঢাকার নওয়াব পরিবারের কয়েকজন তরুণ সংস্কৃতিসেবী মূলত বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাদের উদ্যোগেই ১৯২৭-২৮ সালে নির্মিত হয় ‘সুকুমারী’। এ সিনেমার নায়ক নায়িকা ছিলেন খাজা নস্রুল্লাহ ও সৈয়দ আবদুস সোবহান। তখনো বাংলাদেশে নারীদের অভিনয়ের রেওয়াজ চালু হয়নি। নওয়াব পরিবারের উদ্যোগেই ঢাকায় ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ তৈরি হয়।  এর প্রযোজনায় ১৯৫১ সালে ঢাকার মুকুল হলেমুক্তি পায় নির্বাক চলচ্চিত্র দ্য লাস্ট কিস’।

     দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে নাজীর আহমদ ‘ইন আওয়ার মিডস্ট’ নামে একটি তথচিত্র নির্মাণ করেন,যা ছিল এদেশের প্রথম তথ্যচিত্র।

সোনালী দিনের মিষ্টি প্রেম!
'মুখ ও মুখোশ ছবির একটি দৃশ্য 

     ১৯৫৪ সালে গঠিত হয় ইকবাল ফিল্মস এবং কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকারস লিমিটেড।  এই এইবাল ফিল্মসের ব্যানারেই ১৯৫৬ সালে মুক্তি পায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র- মুখ ও মুখোশ।এ ছবিতে নায়িকা হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রামের পূর্ণিমা সেন। পরিচালক হিসেবে ছিলেন আবদুল জব্বার খান। যিনি পরবর্তীতে জোয়ার এলো (১৯৬২), নাচঘর (১৯৬৩), কাচ কাটা হীরা (১৯৭০) নির্মাণ করেন। পঞ্চাশের দশকে ফতেহ লোহানীর  ‘আসিয়া’ (১৯৬০) এবং এহতেশামের ‘রাজধানীর বুকে’(১৯৬০) চলচ্চিত্র দুটি ঢাকার বুকে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। 

     ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ সালে এদেশে মুক্তি পায়নি কোন চলচ্চিত্র। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থাপিত বিলের মাধ্যমে গঠিত হয় ইউএফডিসি। ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হয়, অনেকেই এগিয়ে আসে। ইউএফডিসির সহযোগিতায় ১৯৫৯ সাল থেকে প্রতিবছর ছবি মুক্তি পেতে শুরু করে। মূলত এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ষাটের ও সত্তরের  দশকের সেই সোনালী দিনগুলি! যা আজো আমাদের কাছে অমলিন।
    শুরুর দিকে এদেশের চলচ্চিত্রে ছিল নানান সীমাবদ্ধতা, প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল প্রচুর। তবু প্রতিটি ছবিই ছিল শিল্পমানে উত্তীর্ণ। অর্থাৎ আমাদের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল শুদ্ধতার অঙ্গীকার নিয়েই!




Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!