আঁকতে নেই মানা!!!







ছোটবেলায় পড়ার ফাঁকে খাতায় আঁকিবুকি করতে গিয়ে মায়ের হাতের বকুনির অভিজ্ঞতা সবারই আছে। কিংবা এখনো এক টুকরা সাদাকাগজ ও কলম বা পেন্সিল পেলে মনের অজান্তেই নিজের শিল্পি প্রতিভা জানান দিতে থাকে সবার। এর মধ্যে আপনি মন খুলে কিছু করার যে অনুভূতি পাবেন খুব কম জায়গাতেই এটি পাওয়া যায়। আপনার হাতের কলম বা পেন্সিলটি তখন যেন আপনার মনের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে । 

সম্প্রতি ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি ও কলেজ অফ নিউ জার্সির একদল আর্ট থেরাপিস্ট তুলে এনেছেন এর ভেতরকার গুপ্ত রহস্যটি। এই রিসার্চ প্রোগ্রামে তারা ২৬ জন মানুষের একটি দল গঠন করেন যাদের মধ্যে ৮ জন পেশাদার চিত্রশিল্পী। সবার মাথায় পরিয়ে দেয়া হয় স্পেশাল ব্রেইন-ইমেজিং হেড ব্যান্ড এবং দেয়া হয় ছবি আঁকার খাতা ও রঙ পেন্সিল। সবাইকে তিন মিনিট সময়ের মধ্যে মনমত তিনটি ছবি আঁকতে দেয়া হয় যাদের মধ্যে নির্ধারিত ছিল ডুডলিং, কালারিং ও যা খুশি তা। 

ছবি আঁকার পর বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণকারীদের সাথে তাদের ছবি আঁকার অনুভূতি নিয়ে কথা বলেন এবং তাদের সেই মুহূর্তের মানসিক অবস্থা জানতে চান। সবাই জানান পরীক্ষা চলাকালীন সময় তারা নিজেদের ভাল আইডিয়া সম্পরকে জেনেছেন, এবং তারা যেকোন সমস্যা সমাধানে আগের চেয়ে নিজেদের বেশি উপযুক্ত মনে করছেন। কিন্তু তারা আক্ষেপ জানান এই মজার পরীক্ষার জন্য তাদের অনেক কম সময় দেয়া হয়েছে ,তারা তিন মিনিটের চেয়ে আরো বেশি সময় আশা করেন। ব্রেইন- ইমেজিং হেডব্যান্ড এর রিপোর্ট অনুযায়ী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ প্রিফ্রন্টাল করটেক্সে (যা মানুষের আবেগ, অনুভুতি,ব্যক্তিত্তের বহিঃপ্রকাশ,সিদ্ধান্ত গ্রহনের মত কাজগুলোর নিয়ন্ত্রক) রক্ত সরবরাহের বৃদ্ধি দেখা যায়। 

কিছু অংশগ্রহনকারী এই পরীক্ষাটি অন্যদের চেয়ে বেশি উপভোগ করেছিলেন এবং পেশাদার চিত্রশিল্পীদের কাছে রঙ্গিন ছবি আঁকার ব্যাপারে উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়। তাদের এই উদ্বেগকে অনেকটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, তারা হয়ত তাদেরকে দেয়া রঙ বা সময় নিয়ে খুশি ছিলেন না। তারা সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না এবং আরো ভালভাবে আঁকতে চাইছিলেন। 

সবমিলিয়ে গবষকেরা এই সিধান্তে আসেন যে, ছবি আঁকা বা নকশা করা যেকোন সাধারণ মানুষের জন্য উপভোগ্য ও চিন্তামুক্ত। গবেষক দলের একজন গিরিজা কাইমাল( লেখক ও অধ্যাপক, ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি) সমগ্র ব্যাপার টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, আমরা সবসময় আমাদের কাজ নিয়ে একধরণের ঝুঁকির মধ্যে থাকি এই নিয়ে যে কাজটি ভাল নাকি খারাপ? সমাজ কাজটিকে কেমন চোখে দেখবে? আমরা কি এর জন্য যোগ্য নাকি অযোগ্য? তিনি বলেন, এই পরীক্ষাটি মানুষকে এই বার্তা দেবে যে নিজেকে ক্রমাগত বিচার করতে থাকলে মানুষ তার স্বকীয়তা হারায় এবং নিজের মনমাফিক কাজ নিজেকে ভালভাবে জানতে শেখায়। তাই জীবনের দুশ্চিন্তাগুলোকে কিছুক্ষনের জন্য দূরে ঠেলে এখনই বসে পড়ুন না এক টুকরো কাগজ আর রঙ্গিন পেন্সিল নিয়ে!!!

Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!