যেখানে সাঁইর বারামখানা
"যেখানে সাঁইর বারামখানা
শুনিলে প্রাণ চমকে উঠে
দেখতে যেমন ভুজাংগনা"
ফকির লালন সাঁই। গানের মাধ্যমে যিনি মানবতাকে স্থান দিয়েছেন সবার উপরে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ছিল তার কাছে সমান। মহান এ বাউল সম্রাটকে স্মরণ করতে প্রতি বছর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় সাঁইজির বারামখানায় হাজির হন তাঁর ভক্ত শিষ্যগণ। উৎসবে তারা গানের মাধ্যমে স্মরণ করেন লালন সাঁইকে। লালন তাঁর জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমায় আখড়া বাড়িতে ভক্ত অনুসারীদের নিয়ে সারা রাত গান ও নানা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর দোল পূর্ণিমায় ভক্তগ্ণ এখানে উপস্থিত হয়ে তাঁকে স্মরণ করেন।
উৎসবের আগ থেকেই সারা দেশ থেকেই বাউলগ্ণ আখড়ায় আসতে শুরু করেন । এ যেন বাউলদের সবচে বড় মিলনমেলা। শুধু বাউলরাই উৎসবে আসেন না, হাজার হাজার লালন ভক্ত, অনুসারী ভাবশিষ্য এখানে আসেন উৎসব পালনের জন্যে। প্রায় সবাই গায়ে জড়িয়ে নেন শ্বেতবসন। কারো কারো গায়ে গেরুয়াবসনও দেখতে পাওয়া যায়।
ছেউড়িয়ার মূল গেট দিয়ে ঢুকতে গেলেই দেখতে পাওয়া যায় এক অন্যরকম আবহ। সাধু সন্ন্যাসীরা নিজেদের মত জায়গা বেছে বসে স্মরণ করতে থাকেন প্রিয় সাঁইজিকে। আগরবাতি, ধূপের ধোয়া আর লালনের গানে নিজেদের অন্য এক জগতে নিয়ে যান বাউলেরা। কোথাও কোথাও দলবদ্ধ হয়ে সিদ্ধির আসরেও বসতে দেখা যায় ভক্তদের, যা উৎসবের একটি সাধারণ চিত্র।
উৎসবের প্রথম দিন সকালে সাধু গুরু কতৃপক্ষের দেয়া সকালের অধিবাসে লালন ভক্তগ্ণ বাল্যসেবা গ্রহণ করেন। দুপুরে কালিগঙ্গা নদীতে স্নান সেরে সেরে হাজার হাজার বাউল ফকির পূণ্যসেবা গ্রহণ করেন। এরপরই শুরু হয় উৎসবের আসল পর্ব। একতারা, দোতারা, ঢোল, আর বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ছেউড়িয়া, কালীগঙ্গার তীর। ছোট আসরে বাউলেরা মেতে ওঠেন লালনের গানে। সাথে সাথে চলে দীক্ষাপর্ব।
সারা রাত ধরে গানে মেতে থাকেন লালন ভক্তগ্ণ। বাউলেরা কখনও নেচে হেলতে দুলতে নিজেদের সবকিছুর উপরে নিয়ে শোনাতে থাকেন একের পর এক গান। পুরো আঙ্গিনা মেতে ওঠে লালনের গানে।কখনও একই সাথে চলতে থাকে লালনের সমাধিস্থলে তাঁর ভক্তদের শ্রদ্ধানিবেদন।
মূলত তিনদিন ধরে চলে এ উৎসব। তিনদিনই লালন ভক্তগ্ণ নিজেদের লালনের গানে ডুবিয়ে রাখেন। উৎসব শেষে কিছুটা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তারা ফিরে যান নিজ নিজ ক্ষেত্রে, আবারো গুরুর চরণে ফিরবার আসায়!
মূলত তিনদিন ধরে চলে এ উৎসব। তিনদিনই লালন ভক্তগ্ণ নিজেদের লালনের গানে ডুবিয়ে রাখেন। উৎসব শেষে কিছুটা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তারা ফিরে যান নিজ নিজ ক্ষেত্রে, আবারো গুরুর চরণে ফিরবার আসায়!
Comments
Post a Comment