হালের চলচ্চিত্র ও তার হালচাল





যে কোন দেশের সংস্কৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে সে দেশের চলচ্চিত্র। একটি দেশের মানুষ, তাদের কথা, তাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস সবই চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রধান খোরাক হচ্ছে চলচ্চিত্র। এদেশের চলচ্চিত্রের রয়েছে এক সোনালী ইতিহাস। ষাট বা সত্তরের দশকে সাদা কালো সেইসব চলচ্চিত্রের সেইসব দিনগুলো আজো আমাদের মনে দেয় দোলা। রাজ্জাক কবরীদের সেই সব সিনেমাগুলো দেখার জন্যে হলে হলে পড়ে যেত হিড়িক। শবনম, কবরী, শাবানা, সুচরিতা দের মত নায়িকারা হৃদয়ে দোলা দিত হাজারো তরুণের।

কালের পরিক্রমায় কেটে গেছে অনেকদিন। বিনোদনের মাধ্যম চলচ্চিত্র পেয়েছে নানাবিধ পরিবর্তন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যের বিষয়, গত কয়েক দশকে আমাদের চলচ্চিত্র আশা অনুযায়ী উপরে উঠতে পারেনি। দিন দিন কমেছে মান।ফলে দর্শক হয়েছে হল বিমুখী। বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র গুলীর মান দিন দিন অধোগতির দিকে যায়। গৎবাঁধা  কিছু সস্তা কাহিনী নিয়ে ছবি তৈরি হতে থাকে।

আশির দশকেও আমরা পেয়েছি আমজাদ হোসেনের ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ র মত চলচ্চিত্র। এছাড়াও সুভাষ দত্তের ‘সকাল সন্ধ্যা’, কামাল আহমেদের ‘গৃহলক্ষ্মী’ , আমজাদ হোসেনের ‘ভাত দে’, ‘সখিনার যুদ্ধ’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। কিন্তু এর কিছু সময় পরই চলচ্চিত্র খাতে নেমে আসে এক ভয়াবহ দুর্যোগ কাল। আকাশ সংস্কৃতির অতল গহ্বরে ঢুকে যেয় চলচ্চিত্র। একের পর এক মানহীন ছবি নির্মিত হতে থাকে। অশ্লীলতার জোয়ারে ভেসে যেতে থাকে আমাদের এ খাত। তারপরো একদম যে ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র যে বের হয়নি তা কিন্তু নয়, তবে সংখ্যায় তা অনেক কম। এ ধরণের ছবি গুলোর মধ্যে আমরা দেখি, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, হারুণুর রশিদের ‘মেঘের অনেক রং’, চাষী নজরুল ইসলামের হাঙর নদী গ্রেনেড, হুমায়ূন আহমেদের ‘আগুনের পরশমণি’, নাসিরউদ্দিন ইউসুফের ‘একাত্তরের যিশু’ র মত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভিন্নধারার চলচ্চিত্র।

এ শতাব্দীর শুরুর দিকে বেশ কিছু ভিন্নধারার ছবি দর্শকমনে স্থান করে নেয়। চাষি নজরুল ইসলামের ‘হাসন রাজা’, মোরশেদুল আলমের ‘দুখাই’,’লালসালু’ কাজী মোরশেদের ‘ঘানি’ কথা না ব্ললেই নয়। তবে এ সময়ের ছবিগুলোর মধ্যে এক নতুন ধারার তৈরি করেন প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদ। তাঁর সামাজিক ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র গুলো এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। নতুন কিছু যেন চলচ্চিত্র এসে যুক্ত হয়। তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’, মুক্তির গান’, রানওয়ে’ ‘অন্তরযাত্রা’  চলচ্চিত্রে যোগ করে এক ভিন্নধারা। চলচ্চিত্রে কিছুটা প্রাণ ফিরে আসে। ২০০৩ সালে অস্কারের জন্য মনোনীত হয় মাটির ময়না। এছাড়া ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অস্কারের জন্য পেশ করা হয় হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘শ্যামল ছায়া’, আবু সাইয়িদের ‘নিরন্তর’, গোলাম রাব্বানি বিপ্লবের স্বপ্নডানায়।

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা তরুণ নির্মাতাদের বেশ কয়েকটি উল্লেখ করার মত ছবি দেখতে পাই। যার মধ্যে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ছবিগুলো সবমহলে পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। তাঁর নির্মিত ‘ব্যাচেলর’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, টেলিভিশন’ ইত্যাদি ছিবি শুধু দেশের ভিতরেই নয়, দেশের বাইরেও পেয়েছে দারূণ জনপ্রিয়তা। এছাড়া কামার আহমেদ সাইমনের ‘শুনতে কি পাও!’ ছবিটিও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আরো আমরা দেখতে পাই, অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’, নাসিরউদ্দিন ইউসুফের ‘গেরিলা’ ইত্যাদি ছবি সাধারণ দর্শকদের বহুদিন পর আবারো হল্মুখী করেছে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে দেয়, সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই ফিরিয়ে আনা যাবে আমাদের সেই পুরোনো দিনের গৌরব!

চলচ্চিত্র ফিরে পাক  তাঁর অতীত গৌরব। আবারো এদেশের মানুষ হলে গিয়ে ছবি দেখুক। এমনদিন হয়ত আর খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্বমঞ্চে দখল করে নিবে এক অনন্য স্থান। 


Comments

Popular posts from this blog

মজার খেলা ডার্ট বোর্ড

হাই – লাইন ডিফেন্স ইন ফুটবল

সংখ্যা দিয়ে বন্ধুত্ব!!!